লোগো ডিজাইন কী? লোগো ডিজাইন করে কিভাবে আয় করা যায়?
গ্রাফিক্স ডিজাইন এর বহুল বিস্তৃত ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি ক্ষেত্র হলো লোগো ডিজাইন। লোগো ডিজাইন কী আমাদের অনেকের মনে এমন প্রশ্ন আশে। আমরা আমাদের আশেপাশে একটু ভালো করে লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবো যে আমাদের চারপাশেই অসংখ্য লোগো বিদ্যমান রয়েছে।
সেটা হতে পারে আমাদের ঘরের রেফ্রিজারেটরের লোগো, কোনো ম্যাগাজিনের লোগো, মোবাইলের লোগো, টেলিভিশনের লোগো, কোনো দোকান বা রেস্টুরেন্টের লোগো সহ আরো অনেক কিছুই। আজকে আমরা লোগো ডিজাইন কী এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়সমূহ নিয়ে বিস্তারিত জানবো।
অবশ্যই পড়বেন: গ্রাফিক্স ডিজাইন কী
লোগো ডিজাইন কী?
লোগো ডিজাইনের বৃত্তান্ত সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই আমাদেরকে জানতে হবে লোগো ডিজাইন কী। লোগো হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের মাধ্যমে তৈরি হওয়া এক ধরণের প্রতীক বা সংকেত যা কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, সংস্থা, দোকানপাট সহ যেকোনো কিছুর পরিচয় বহন করে।
একজন মানুষের ক্ষেত্রে যেমন তার নাম তার পরিচয় হিসেবে কাজ করে, তেমনি কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা সংস্থার ক্ষেত্রে লোগো হলো তাদের ব্র্যান্ড বা পরিচয়৷ আর এই লোগোগুলো তৈরীর প্রক্রিয়াকে বলা হয় লোগো ডিজাইন করা।
প্রায় সকল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন রকম সংগঠন, সংস্থা, বড় বড় দোকানপাঠ – সকলেই নিজ নিজ স্বকীয়তা রক্ষার্থে ও আলাদা পরিচিতি অর্জনে, নিজ নিজ লোগো ব্যবহার করে থাকে। যার ফলে উক্ত প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা সংস্থাগুলোকে মানুষ সহজেই চিহ্নিত করতে পারে এবং মনে রাখতে পারে। এভাবে ধীরে ধীরে সেগুলো মানুষের কাছে ব্র্যান্ডে পরিণত হয়।
যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি। এগুলোকে চিহ্নিত করার জন্য কিন্তু আপনার ঐ প্লাটফর্মগুলোতে ভিজিট করতে হয় না। আপনি তাদের লোগো দেখেই সেগুলো শনাক্ত করে ফেলতে পারেন। কারণ ঐ লোগোগুলোয় তাদের পরিচয় বহন করছে। অর্থাৎ, তাদের লোগোগুলোয় তাদের ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।
অবশ্যই পড়বেন: সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কী
লোগো ব্যবহারের উদ্দেশ্য
লোগো ডিজাইন কী সে সম্পর্কে আমরা জানলাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমি লোগো কেন ব্যবহার করবো? অর্থাৎ, লোগো ব্যবহারের উদ্দেশ্য কী?
নিম্নে লোগো ব্যবহারের উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করা হলো :
- আপনার প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, সংস্থা ইত্যাদিকে আলাদা পরিচিতি প্রদান করা।
- মানুষের দৃষ্টি এবং মনোযোগ আকর্ষণ করা।
- নিজেদেরকে পেশাদার বা প্রফেশনালভাবে উপস্থাপন করা।
- প্রথম দর্শনেই মানুষের ভালো মনোভাব তৈরি করা।
- প্রতিদ্বন্দ্বী বা অন্যান্যদের চেয়ে নিজেদেরকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা।
- ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি এবং বৃদ্ধি করা।
- নিজেদের প্রমোশন এবং মার্কেটিং করা।
- নিজেদের ব্র্যান্ডের প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা তৈরি করা।
- কোনো গুরুত্বপূর্ণ বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছানো।
- নিজেদের প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা সংস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করা ইত্যাদি।
লোগো ডিজাইন কী-লোগোর প্রকারভেদ
লোগোকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়, যথা :
- ওয়ার্ডমার্ক লোগো(Wordmark Logo)
- লেটারমার্ক লোগো(Lettermark Logo)
- কম্বিনেশন মার্ক লোগো (Combination Mark Logo)
- ব্র্যান্ড মার্ক লোগো (Brand Mark Logo)
সাধারণত এই চার ধরণের লোগো ব্যবহার করা হয় থাকে এ ছাড়াও কাজের ভিন্নতায় আরো কিছু ধরণ লক্ষ্য করা যায়।
-
ওয়ার্ডমার্ক লোগো
এই ধরণের লোগোকে লোগো টাইপও বলা হয়। নাম শুনেই যেমনটা আন্দাজ করতে পারছেন, এই ধরণের লোগোগুলো মূলত টাইপোগ্রাফি নির্ভর হয়ে থাকে। অর্থাৎ, টাইপোগ্রাফির মধ্যেই প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের নাম উল্লেখ থাকে। লোগোর চাহিদা অনুযায়ী টাইপোগ্রাফির ডিজাইন, স্টাইল, রঙ পরিবর্তিত হতে পারে।
গুগল(Google),ইবেয়(EBay), কোকাকোলা(Coca-Cola) সহ অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান এই ধরণের লোগো ব্যবহার করে।
আপনার প্রতিষ্ঠান যদি নতুন হয় এবং আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম যদি তুলনামূলক ছোট হয় সেক্ষেত্রে ওয়ার্ডমার্ক লোগোই হতে পারে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প। সাধারণত ফটোগ্রাফাররা এই ধরণের লোগো ব্যবহার করে।
-
লেটারমার্ক লোগো
লেটারমার্ক লোগো আবার মনোগ্রাম লোগো নামেও পরিচিত। সাধারণত এই ধরণের লোগোতে কোনো প্রতিষ্ঠানের নামের প্রথম অক্ষর বা একদম সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করা হয়। যেমন : সিএনএন(CNN), এইচবিও(HBO), ইয়াহু(Yahoo), বিবিসি(BBC) ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান লেটারমার্ক লোগো ব্যবহার করে।
লেটারমার্ক লোগোও ওয়ার্ডমার্ক লোগোর মতোই টাইপোগ্রাফি ভিত্তিক হয়ে থাকে, তবে এই ক্ষেত্রে পূর্ণ নামের পরিবর্তে শুধু প্রথম অক্ষর বা সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আপনি যদি আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ভিজুয়াল আইডেন্টিটি দুটোই একইসাথে দেখাতে চান সেক্ষেত্রে এই ধরণের লোগো ব্যবহার করা হয়।
-
কম্বিনেশন মার্ক লোগো
কম্বিনেশন মার্ক লোগোর আসলে নির্দিষ্ট কোনো গঠন নেই। অন্যান্য লোগোগুলোর একটি বা দুইটির মিশ্রণে এটি তৈরি হয়। সাধারণত এই ধরণের লোগোতে একটি টাইপোগ্রাফি এবং একটি ছবি বা প্রতীক দেখা যায়।
বার্গার কিং(Burger King), পিজ্জা হাট(Pizza Hut), জাগুয়ার (Jaguar) ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান এই ধরণের লোগো ব্যবহার করে।
-
ব্র্যান্ড মার্ক লোগো
ব্র্যান্ড মার্ক লোগোকে পিক্টোরিয়াল মার্ক লোগো বা লোগো সিম্বলও বলা হয়। এই ধরণের লোগো সাধারণত ডিজাইন এবং ছবি বা প্রতীক দিয়ে তৈরি করা হয়। এই ধরণের লোগোতে যে ছবি বা চিত্র ব্যবহার করা হয় সেটি দেখতে কোনো আইকন(Icon) এর মতো এবং এর বাস্তবিক অর্থ থাকে।
যেমন ধরুন এ্যাপল প্রতিষ্ঠান, টুইটার ইত্যাদি। এ্যাপল(Apple) প্রতিষ্ঠানটির নাম শুনলে সবার আগে আমাদের আপেলের কথায় মনে আসে। এর লোগোটি কিন্তু ঠিক তেমনই। আবার টুইটার শব্দের অর্থ হলো কিচিরমিচির শব্দ। এই শব্দটি শুনে আমাদের পাখির কিচিরমিচির শব্দের কথা মনে পরে যায়। টুইটারের লোগোতেও কিন্ত একটি ছোট নীল বার্তাবাহক পাখি রয়েছে। এজন্য এগুলোকে বলা হয় ব্র্যান্ডমার্ক লোগো।
অবশ্যই পড়বেন: কন্টেন্ট মার্কেটিং কী
লোগো ডিজাইন কী?-লোগো নির্ধারণের সময় কী কী বিষয় বিবেচনা করা উচিত?
লোগো ডিজাইন কী, লোগো ব্যবহারের উদ্দেশ্য ও এর প্রকারভেদ সম্পর্কে আমরা জানলাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমি যখন একটি লোগো নির্বাচন করবো তখন কী কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত?
লোগো নির্ধারণের সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত :
-
স্ক্যালাবিলিটি(Scalability)
লোগো ডিজাইন করার সময় স্ক্যালাবিলিটি সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরী৷ আপনাকে আপনার প্রমোশন ও মার্কেটিংয়ের জন্য বিভিন্ন জায়গাতেই লোগো ব্যবহার করতে হবে যেমন সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টস(Posts), বিজনেস কার্ডস(Cards), পোস্টার্স(Posters), বিলবোর্ড সহ এরকম আরো অনেক কিছুতেই। তাই আপনার লোগো যাতে এগুলোর ভিন্ন ভিন্ন সাইজের সাথে ঠিক মতো ফিট হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ডিংয়ের যত পুরাতন এবং ডিজিটাল প্রক্রিয়া রয়েছে, সবগুলোতেই লোগোটি ঠিকঠাক মতো ফিট হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য আপনি ছোট এবং বড় উভয় ফরম্যাটেই লোগো বানিয়ে তা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন অথবা ভিন্ন ভিন্ন খাতে ব্যবহারের জন্য লোগোটির বিভিন্ন সাইজের ভার্সন(Version) তৈরি করে রাখতে পারেন।
-
ব্র্যান্ড গোলস(Goals)
একটি লোগো তৈরি করার সময় আপনাকে অবশ্যই আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের ভবিষ্যৎ গোল(Goal) বা লক্ষ্য নিয়ে বিস্তারিতভাবে গবেষণা করতে হবে। আপনার লোগোর কনসেপ্টে যেন আপনার ব্র্যান্ড বা ব্যবসার ভিত্তি, তত্ত্ব বা গোলের প্রতিচ্ছায়া দেখা যায় তা আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে।
অর্থাৎ, আপনার লোগো দেখেই যাতে মানুষ আপনার প্রতিষ্ঠানের তত্ত্ব ও উদ্দেশ্য অনুমান করতে পারে, তা বিবেচনায় রাখতে হবে।
-
আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীদের লোগো পর্যবেক্ষণ করুন
আপনার নিজের জন্য লোগো নির্বাচনের আগে আপনার অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের লোগো সঠিকভাবে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করুন। আপনার কনসেপ্ট আর তাদের কনসেপ্ট যাতে মিলে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ অন্যথায়, আইনি এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াগত জটিলতার মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে।
তাদের লোগো পর্যবেক্ষণ করে বোঝার চেষ্টা করুন তারা কী রকম ডিজাইন, লেয়াউট, পরিকল্পনা বা গোল নিয়ে সেটি তৈরি করেছে। আর সেটি কতটা কার্যকরী হয়েছে এবং মানুষ তা কেমন পছন্দ করছে তা বিবেচনা করুন। এর ভালো-মন্দ সবকিছু যাচাই-বাছাই করে আপনি আপনার নিজের লোগোটি নির্ধারণ করুন৷
লোগো ডিজাইন করে কীভাবে অর্থ উপার্জন করা যায়?
লোগো ডিজাইনিংয়ের মাধ্যমে আপনি বিভিন্নভাবেই অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। তবে এর জন্য আপনার লোগো ডিজাইনিং সফরওয়্যার এবং সেগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। জনপ্রিয় কয়েকটি লোগো ডিজাইনিং সফটওয়্যার হলো :
- অ্যাডোব ইলাস্ট্রেটর(Adobe Illustrator)
- কোরেলড্র(CorelDRAW)
- ইংকস্কেপ(Inkscape)
- গ্র্যাভিট ডিজাইনার(Gravit Designer)
- অ্যাফিনিটি ডিজাইনার(Affinity Designer)
- লুকা(Looka)
- হ্যাচফুল(Hatchful)
- ক্যানভা(Canva) ইত্যাদি।
এরকম আরো কিছু সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো ঠিক মতো ব্যবহার করতে জানলে, লোগো ডিজাইন কাজটি আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে আসবে।
আমাদের আশেপাশের অনেক মানুষই সরাসরি বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়তই তাদের নিজ নিজ কাজের জন্য লোগো ডিজাইনার খুঁজে থাকেন। আপনি যদি মনে করেন যে আপনি সেই কাজগুলো করতে পারবেন তাহলে আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
আপনার অভিজ্ঞতা, কাজের স্যাম্পল সবকিছু বিবেচনা করে তাদের শর্তাবলী ও চাওয়া-পাওয়ার সাথে মিললে তারা আপনাকে কাজটি দিবে। অতঃপর কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারলে সেখান থেকে আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি চাইলে ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলোতেও লোগো ডিজাইন করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। বেশ কিছু জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইট রয়েছে, যেমন :
- ফাইভার.কম(Fiverr.com)
- আপওয়ার্ক.কম(Upwork.com)
- পিপলপারআওয়ার.কম(PeoplePerHour.com)
- ফ্রিল্যান্সার.কম(Freelancer.com)
- গুরু.কম (Guru.com) ইত্যাদি।
এই ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলো থেকে কাজ পাওয়ার জন্য আপনার প্রথমেই প্লাটফর্মগুলোতে একটি একাউন্ট খুলতে হবে। একাউন্ট খোলা হয়ে গেলে দেখবেন এই প্লাটফর্মগুলোতে প্রায়ই বিভিন্ন ক্লায়েন্টরা তাদের নিজ নিজ প্রজেক্টের জন্য লোগো ডিজাইনার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকেন।
অন্যান্য আরো অনেক লোগো ডিজাইনারের মতো মতো আপনিও সেখানে আবেদন করতে পারেন। যদি আপনার কাজ ক্লায়েন্টের পছন্দ হয়, তাহলে তিনি আপনাকে কাজটির জন্য ভালো মানের পারিশ্রমিক দিবেন।
শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে তার যখন আবারো লোগো ডিজাইন করানোর দরকার হবে তখনও দেখা যাবে তিনি আপনাকে দিয়েই কাজ করাচ্ছেন। তাছাড়া তার পজিটিভ রিভিউ দেখে অন্যান্য ক্লায়েন্টদেরও আপনার প্রতি ভালো ধারণা জন্মাবে এবং তারাও আপনাকে কাজ দিতে ভরসা পাবে।
অবশ্যই পড়বেন: ফ্রিল্যান্সিং কী
লোগো ডিজাইন করে কত টাকা আয় করা যায়?
আসলে এই প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই। এর উত্তরে কেবল বলা যায়, “সীমাহীন”। স্থান, মানুষ, প্লাটফর্ম, লোগোর ধরণ, আপনার দক্ষতা, যোগ্যতা, আপনি কয়জন ক্লায়েন্ট পাচ্ছেন, কয়টা কাজ করতে পারছেন এই সমস্ত বিষয়গুলোর উপর আপনার আয় নির্ভর করছে। এখানে আসলে কোনো নির্দিষ্ট আয় নেই। কোনো মাসে ৮০,০০০ টাকাও উপার্জন হতে পারে আবার কোনো মাসে আয়ের পরিমাণ ৮০০০ টাকাও হতে পারে।
আপনি যখন লোগো ডিজাইনিংয়ে একদম নতুন অর্থাৎ শুরুর দিকে থাকবেন, সেক্ষেত্রে হয়তো প্রথমদিকে আপনার আয় কিছুটা কম হবে। যদি আপনি সফলভাবে কয়েকটি প্রজেক্ট শেষ করতে পারেন, তখন আপনার সুনাম চারিপাশে ছড়িয়ে পরবে। ফলশ্রুতিতে আপনি আরো বেশি বেশি কাজ পাবেন এবং আপনার আয়ও বাড়তে থাকবে।
এছাড়াও আপনি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলোতেও লোগো ডিজাইন করে আয় করতে পারেন। অনেকের মতে, ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলো থেকে তুলনামূলক বেশি আয় করা সম্ভব। এই প্লাটফর্মগুলোর আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে এখানে কিছু ক্ষেত্রে আপনার কাজের মূল্য বা পারিশ্রমিক আপনি নিজেই নির্ধারণ করতে পারবেন।
আপনার কাজ দেখে ক্লায়েন্টের পছন্দ হলে তারা আপনাকে আপনার প্রাপ্য সম্মানী দিবে। এমনকি অনেক সময় কাজ দেখে সন্তুষ্ট হলে তারা বোনাসও দিয়ে থাকে। তাছাড়া পরবর্তীতে আবারও তাদের থেকে কাজ পাওয়ার এবং সেখান থেকে উপার্জনের সুযোগ তো রয়েছেই।
তাছাড়া তার রিভিউ দেখে অন্যান্য ক্লায়েন্টরাও সহজেই আপনার উপর ভরসা করতে পারবে এবং আপনাকে কাজ দিতে অনুপ্রাণিত হবে। এভাবে আপনার আয় দিনে দিনে বাড়তে থাকবে।
লোগো ডিজাইন কী ভাবে শিখবেন?
লোগো ডিজাইন কী, লোগো কেন করা হয়, কয় প্রকারের লোগো রয়েছে, লোগো ডিজাইন করে কীভাবে আর কী পরিমাণ উপার্জন করা সম্ভব এই বিষয়গুলি আমরা জানলাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমি যে লোগো ডিজাইনিং করবো তা শিখবো কীভাবে?
লোগো ডিজাইন শেখার বেশ কিছু সহজ এবং কার্যকরী উপায় রয়েছে। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো :
-
লোগো ডিজাইন কোর্স করে
সহজে লোগো ডিজাইন শেখার একটি উল্লেখযোগ্য উপায় হলো লোগো ডিজাইন কোর্স করা। সেটা আপনি অনলাইন, অফলাইন যেখান থেকে ইচ্ছা করতে পারেন। এই কোর্সগুলির ভিতর কতগুলো হচ্ছে পেইড কোর্ড আর কতগুলো একদম সম্পূর্ণ ফ্রি। তবে পেইড কোর্স থেকে বিষয়গুলো একদম বিস্তারিতভাবে আয়ত্ত করা যায় বলে, আমাদের পরামর্শ থাকবে পেইড কোর্স করার।
বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতেই এই লোগো ডিজাইনিং কোর্সগুলো পাওয়া যায়। আপনি আপনার যে ভাষাতেই সুবিধা সে ভাষাতেই কোর্সগুলো করতে পারেন।
-
ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে
লোগো ডিজাইন শেখার আরেকটি কার্যকরী উপায় হলো ইউটিউবে লোগো ডিজাইনিং টিউটোরিয়াল দেখা। ইউটিউব হলো এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে প্রায় সকল সমস্যা এবং জিজ্ঞাসার সমাধান পাওয়া যায়।
লোগো ডিজাইন নিয়েও ইউটিউবে বিভিন্ন ভাষায় অনেকগুলো ভিডিও টিউটোরিয়াল রয়েছে। আপনি আপনার পছন্দমতো যে ভাষাতে ইচ্ছা, যে টিউটোরিয়াল দেখে শিখার ইচ্ছা তা দেখেই শিখতে পারবেন।
ইউটিউবের আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে এক্ষেত্রে আপনার কোনো বিভ্রান্তি থাকলে বা কিছু ভুলে গেলে সহজেই তা আপনি দেখে নিতে পারেন। তাছাড়া কিছু না বুঝলে তা আপনি বারবার দেখে বিষয়টা আয়ত্ত করে নিতে পারেন। এভাবে আপনি খুব সহজেই ইউটিউব থেকে লোগো ডিজাইনিং শিখতে পারবেন।
শেষ কথা
লোগো ডিজাইন কী এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানলাম। আসলে বর্তমানে গোটা বিশ্বেই লোগো ডিজাইনের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে গেছে। যার কারণে এখন লোগো ডিজাইনারদের চাহিদাও অনেক বেশি। তাই আপনার যদি লোগো ডিজাইনিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা থাকে, তাহলে আশা করা যায় আপনার জন্য সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।