মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট কী? কীভাবে আপনি একজন মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার হবেন?
বর্তমান সময়ে কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, সকলকেই নিজ নিজ প্রয়োজনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে হয়। যার কারণে এটি এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। মোবাইল ফোনে আমরা বিভিন্ন রকম সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারি, যেগুলোকে মোবাইল অ্যাপস বলা হয়। আর এই অ্যাপসগুলো তৈরীর প্রক্রিয়াকরণই হচ্ছে মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট। আজকে আমরা মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট কী এবং এর সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
অবশ্যই পড়বেন
মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট কী?
মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মোবাইল ডিভাইস বা মোবাইল ফোনের জন্য মোবাইল অ্যাপসগুলোকে ডেভেলপ বা বিকশিত করা হয়। এই সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনগুলো এমনভাবে ডিজাইন বা তৈরি করা হয়, যাতে মোবাইল ডিভাইস যেমন স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট কম্পিউটারগুলোতে ঠিক মতো ব্যবহার করা যায়।
যেমন ধরুন, ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, পিন্টারেস্ট, হোয়াটসঅ্যাপ এগুলো সবই মোবাইল অ্যাপ। আর এগুলো তৈরি বা বিকশিত করার পদ্ধতিই হচ্ছে মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট।
এই অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মধ্যে কিছু হয়তো ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের(Manufacturing) সময়ই আপনার মোবাইলে ইন্সটল করে দেওয়া হতে পারে বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে মোবাইলে থাকতে পারে। বাকিগুলো হয়তো আপনার ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিতে হবে।
তবে শুধুমাত্র মোবাইল অ্যাপ ইন্সটল বা আপডেটই মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং অ্যাপসগুলোর জন্য ইন্সটলেবল(Installable) সফটওয়্যার বান্ডেল(Bundle) যেমন : কোড, বাইনারি, এসেট(Asset) ইত্যাদি তৈরি করা, ব্যাক এন্ড সার্ভিস বা সেবা যেমন এপিআই(API) সম্বলিত ডাটা এক্সেস(Access) বাস্তবায়ন করা, অ্যাপ্লিকেশনগুলো টার্গেটেড(Targeted) ডিভাইসে পরীক্ষা করে দেখা, সবকিছুই মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের অংশ।
একজন মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপারের কাজ কী?
একজন মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপারকে বিভিন্ন রকম কাজ বা দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেমন :
- মোবাইল প্লাটফর্মগুলোর জন্য অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট করা।
- গ্রাহকের চাহিদা সম্পর্কে জানা এবং সে অনুযায়ী অ্যাপ তৈরি করা।
- নতুন নতুন অ্যাপসের বাস্তবায়ন এবং ইতিমধ্যে বিদ্যমান অ্যাপসগুলোর ডেভেলপমেন্ট করা।
- অ্যাপসগুলোর জন্য নতুন নতুন ফিচার(Feature) এবং ইউজার ইন্টারফেস ডেভেলপ করা।
- অ্যাপ্লিকেশনের প্রাথমিক ভার্সনে কোনো ভুল থাকলে তা ঠিক করা।
- এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে জানা।
- মোবাইল ফাংশনালিটিতে সাহায্য করার জন্য এপিআই(API) ডেভেলপ করা৷
- ফাংশন ডিজাইনার, ইউআই ডিজাইনার, ইউএক্স ডিজাইনার এবং প্রোগ্রামারদের সাথে একত্রে মিলেমিশে কাজ করা।
- জাভা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কে ধারণা থাকা।
- ফ্রন্ট এন্ড এবং ব্যাক এন্ডের যথার্থ লিংকিং(Linking) নিশ্চিত করা।
- মোবাইল অ্যাপসগুলোর জন্য ইন্সটলেবল সফটওয়্যার বান্ডেল তৈরি করা।
- টার্গেটেড ডিভাইসে মোবাইল অ্যাপসগুলোকে পরীক্ষা করে দেখা।
- অ্যাপসগুলোর সর্বোত্তম পারফরম্যান্স এবং ইউজার এক্সপিরিয়েন্স(Experience) নিশ্চিত করা।
- বাগ(Bug) স্থাপন করা এবং অ্যাপ্লিকেশনের পারফরম্যান্স জনিত সমস্যার সমাধান করা।
- স্পষ্ট, সহজে পাঠযোগ্য এবং টেস্টেবল(Testable) কোড তৈরি করা ইত্যাদি।
মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপার কয় ধরণের হয়ে থাকে?
মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপার মূলত তিন ধরণের হয়ে থাকে, যথা :
- আইওএস(IOS) ডেভেলপার
- অ্যান্ড্রয়েড(Android) ডেভেলপার
- অন্যান্য ডেভেলপার
-
আইওএস(IOS) ডেভেলপার
আইওএস ডেভেলপাররা মূলত অ্যাপল(Apple) প্রতিষ্ঠানটির তৈরিকৃত পণ্যের জন্য অ্যাপ ডেভেলপ করে থাকে। এক্সকোড(Xcode), সুইফট(Swift) ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা সাধারণত অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট করে থাকেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন অ্যাপল ডিভাইস সক্রিয় রয়েছে। তাই বাংলাদেশে যখন কোনো প্রতিষ্ঠান অ্যাপ লঞ্চ(Launch) করতে চায়, তখন তাদেরকে এই বিশাল সংখ্যক আইওএস ব্যবহারকারীদের জন্যও অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের কথা চিন্তা করতে হয়।
-
অ্যান্ড্রয়েড(Android) ডেভেলপার
বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বেই স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহার করে থাকেন। এটি মূলত একটি ওপেন-সোর্স অপারেটিং সিস্টেম, যার কারণে এটি ব্যবহার এবং কাস্টমাইজেশন করা, অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম গুলোর তুলনায় অনেক সহজ।
সমীক্ষা মতে, বাংলাদেশের প্রায় ৯৫% এরও বেশি মানুষ অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করে। তাই এখানে কোনো অ্যাপস লঞ্চ করার পরিকল্পনা করা হলে তা প্রথমে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের টার্গেট করেই করা হয়। সে অনুযায়ী ডেভেলপাররা সফটওয়্যার বা অ্যাপস ডেভেলপ করে থাকেন।
-
অন্যান্য ওএস(OS) ডেভেলপার
অন্যান্য ওএস(OS) বা অপারেটিং সিস্টেম ডেভেলপারদের মধ্যে রয়েছে হুওয়ায় ওএস, ব্ল্যাকবেরি(Blackberry) ওএস, জাভা ওএস, সিম্বিয়ান ওএস, উইন্ডোজ(Windows) ওএস ডেভেলপার ইত্যাদি। এদের মধ্যে কেবলমাত্র হুওয়ায়ই মার্কেটপ্লেসে কিছুটা হাইপ তৈরি করতে পেরেছে, তাও অ্যান্ড্রয়েড বা অ্যাপলের তুলনায় অনেক কম। বাকি অপারেটিং সিস্টেমগুলো বলতে গেলে এক রকম অস্তিত্বহীন অবস্থায় আছে৷ তাই বর্তমানে ডেভেলপারগণ প্রায় সবাইই অ্যাপল বা অ্যান্ড্রয়েড ওএসকেই বেছে নিতে চান।
মোবাইল অ্যাপস কয় ধরণের হয়ে থাকে?
মোবাইল অ্যাপস প্রধানত তিন ধরণের হয়ে থাকে, যথা :
- নেটিভ(Native) অ্যাপস
- হাইব্রিড(Hybrid) মোবাইল অ্যাপস
- ওয়েব(Web) অ্যাপস
-
নেটিভ অ্যাপস
কোনো বিশেষ অপারেটিং সিস্টেমকে টার্গেট বা লক্ষ্য করে অ্যাপস তৈরি করাকে বলা হয় নেটিভ অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট। সেটা হতে পারে শুধু আইওএস বা অ্যানড্রয়েড বা অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমগুলোর জন্য। এগুলোর মধ্যে কোনো একটি অপারেটিং সিস্টেম নির্ধারণ করে তা ভালো মতো অপ্টিমাইজ(Optimize) করার প্রক্রিয়াই হলো নেটিভ অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট।
এই অ্যাপসগুলো অনেক স্মুথলি(Smoothly) কাজ করে। তাই এই ধরণের অ্যাপসগুলো ব্যবহার করে গ্রাহকরা যথেষ্ট সন্তুষ্ট থাকে।
-
হাইব্রিড মোবাইল অ্যাপস
হাইব্রিড মোবাইল অ্যাপসের বিশেষত্ব হচ্ছে এটি অ্যাপস এবং ওয়েবসাইট – উভয় ভার্সনেই ব্যবহার করা যায়৷ এর সবচেয়ে সর্বোত্তম উদাহরণ হলো “সুরক্ষা(Surokkha) অ্যাপ”। আপনি এটি মোবাইল সফটওয়্যার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন, অথবা তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট “সুরক্ষা.গভ.বিডি”(Surokkha.gov.bd) থেকেও এটি ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরণের অ্যাপসগুলোই হচ্ছে হাইব্রিড মোবাইল অ্যাপস।
এই অ্যাপসগুলো তৈরিতে এইচটিএমএলফাইভ(HTML5) প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়। যদিও নেটিভ অ্যাপসের মতো এটি এতো দ্রুততর এবং রিলায়েবল(Reliable) নয়, তবে কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে এটি অনেক সুবিধা দিয়ে থাকে। কারণ আপনি যে অপারেটিং সিস্টেমই ব্যবহার করেন না কেন, সবখানেই এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
-
ওয়েব অ্যাপস
ওয়েব অ্যাপসগুলোর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এগুলো সব রকম ডিভাইসে ব্যবহার উপযোগী। যেমন : অনলাইনে বিভিন্ন রকম পাবলিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষার রেজাল্ট, সুরক্ষা.গভ.বিডি ইত্যাদি কাজে ওয়েব অ্যাপসের ভূমিকা অনেক বেশি।
অনেকগুলো অ্যাপস রয়েছে যেগুলো কেবলমাত্র একটি অপারেটিং সিস্টেমকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়। কিন্তু আপনি যদি বৃহত্তর স্বার্থে বা বড় পরিসরে কিছু করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ওয়েব অ্যাপস ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমেই তা করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার যে দক্ষতা প্রয়োজন
একজন মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার হতে হলে আপনাকে নিম্নলিখিত বিষয়ে দক্ষ হতে হবে :
-
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের দক্ষতা
একজন সুদক্ষ মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার হতে হলে আপনার অবশ্যই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে অসাধারণ দক্ষতা থাকতে হবে। বিশেষ করে মোবাইল অ্যাপ ল্যাঙ্গুয়েজ যেমন : জাভাস্ক্রিপ্ট, সিপ্লাসপ্লাস(C++), সিহ্যাশ(C#) ইত্যাদি ল্যাঙ্গুয়েজে। প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে দক্ষতা আপনাকে কোনো চাকরি বা কাজ বা প্রজেক্টের জন্য যোগ্য প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দিবে, কারণ কীভাবে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজকে মোবাইল অ্যাপস তৈরীর কাজে ব্যবহার করা হয় তা আপনার জানা আছে।
-
বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতা
গ্রাহক কী ধরণের অ্যাপস বা সফটওয়্যার ব্যবহার করতে চায়, সেটা বোঝার জন্য একজন মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপারকে গ্রাহকের চাহিদা বুঝতে হবে। মানুষ কী ধরণের মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে, কী ধরণের অ্যাপস তারা বেশি ব্যবহার করতে চায় এই বিষয়গুলি বিশ্লেষণ বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দক্ষতা একজন মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপারের থাকা উচিত।
-
ইন্টারফেস(Interface) ডিজাইন দক্ষতা
অসাধারণ ইউজার ইন্টারফেস দক্ষতা আপনাকে সহজ, সাধারণ, নান্দনিক এবং ফাংশনাল অ্যাপ্লিকেশন ইন্টারফেস ডিজাইন বা তৈরিতে সহায়তা করে। মোবাইল অ্যাপসের ব্যবহার, কার্যকারীতা, সফলতা অনেকাংশেই ভালো একটি ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন তৈরীর উপর নির্ভর করে।
-
সৃজনশীলতা
একজন মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার হিসেবে ব্যবহার উপযোগী সফটওয়্যার বা অ্যাপস তৈরীর জন্য আপনাকে স্পষ্ট ভাষায় প্রোগ্রামিং কোডগুলো লিখতে জানতে হবে। ডেভেলপারদেরকে সৃজনশীলভাবে চিন্তা করতে হয় যে কীভাবে মোবাইল ডিভাইস গ্রাহকের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয় আর সে অনুযায়ী তাদেরকে অ্যাপস তৈরি করতে হয়। আপনার কাজে সৃজনশীলতা আনার জন্য শুধু যে আপনার তত্ত্বীয় এবং টেকনিক্যাল দক্ষতাই প্রয়োজন তা নয়, বরং মুক্তভাবে চিন্তা করার দক্ষতা থাকাও জরুরী৷
-
ক্রস-প্লাটফর্ম অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
প্লাটফর্মগুলোর সংখ্যাধিক্যের জন্য বর্তমানে মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপারদের বিভিন্ন প্লাটফর্ম এবং অপারেটিং সিস্টেমে অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের দক্ষতা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অসাধারণ ক্রস-প্লাটফর্ম অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের দক্ষতা থাকা এবং ক্রস প্লাটফর্ম কনসেপ্ট(Concept) সম্পর্কে ধারণা যেমন : কোড পুনরায় ব্যবহার করা, সার্ভিস(Service) বা সেবা সমর্থন, সাধারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদি দক্ষতা আপনাকে এই সেক্টরে(Sector) যোগ্য প্রতিযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
-
তথ্য নিরাপত্তা
তথ্য নিরাপদে রাখতে পারার দক্ষতা মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপারদের খুব প্রয়োজনীয় একটি দক্ষতা, কারণ এটি মোবাইল অ্যাপসের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ এবং অ্যাপসটিকে নিরাপদে ব্যবহার করতে সহায়তা করে। কীভাবে মোবাইল অ্যাপসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সে ব্যাপারে ভালো ধারণা থাকা, কী কী হুমকির সম্মুখীন হতে পারে তা যাচাই-বাছাই করা এবং নিরাপত্তাজনিত সমস্যার সমাধান কীভাবে করতে হবে সে ব্যাপারে ধারণা থাকা মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্টের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
-
যোগাযোগের দক্ষতা
অসংখ্য, অগণিত টেকনিক্যাল এবং তত্ত্বীয় দক্ষতা ছাড়াও, একজন মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার হিসেবে আপনার কিছু সামাজিক দক্ষতাও থাকা দরকার। তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যোগাযোগের দক্ষতা। আপনার মধ্যে যোগাযোগের ভালো দক্ষতা থাকলে আপনি সহজেই আপনার অন্য সহযোগী ডেভেলপারদের সাথে মিলেমিশে কাজ করতে পারবেন। তাছাড়া যখন আপনি গ্রাহকের কোনো জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে যাবেন, সেক্ষেত্রে আপনার ভালো যোগাযোগের দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে গ্রাহক আপনার অ্যাপসটি ব্যবহার করতেও উৎসাহিত হবে।
কীভাবে আপনি একজন মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার হবেন?
একজন সফল মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার হতে হলে আপনাকে নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে :
-
আপনার শেখার কোনো একটি পথ বেছে নিন
মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার হতে হলে আপনাকে অবশ্যই সেটি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে হবে। আপনি বিভিন্ন মাধ্যম থেকেই তা জানতে পারেন, যেমন :
- মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট কোর্স করে।
- কোনো ট্রেনিং বা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে বা অভিজ্ঞ কারো দ্বারা ব্যক্তিগতভাবে ট্রেনিং নিয়ে।
- বই বা ই-বুক বা পিডিএফ পড়ে।
- ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে।
এগুলো ছাড়াও আরো অনেকভাবেই আপনি মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট শিখতে পারেন। তবে এগুলোই সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম। এগুলোর মধ্যে যেটি আপনার পছন্দ বা যেখান থেকে আপনার মনে হচ্ছে আপনি সহজে বিষয়টি আয়ত্ত করতে পারবেন, সেটিকেই আপনি আপনার শেখার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিন।
-
ফোকাস করার জন্য একটি প্লাটফর্ম বেছে নিন
মোবাইল মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট শেখার প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে আপনাকে শেখার জন্য কোনো একটি প্লাটফর্ম বেছে নিতে হবে। সেটা হতে পারে অ্যান্ড্রয়েড ওএস, অ্যাপল ওএস, ব্ল্যাকবেরি ওএস, উইন্ডোজ ওএস, জাভা ওএস, সিম্বিয়ান ওএস ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি। যদিও বর্তমানে অ্যাপল এবং অ্যান্ড্রয়েডেরই রাজত্ব চলছে। তাই আপনার উচিত এই দুটোর যেকোনো একটিকে প্লাটফর্ম হিসেবে বেছে নেওয়া।
-
আপনার প্রযুক্তিগত দক্ষতার উন্নয়ন ঘটান এবং পরিমার্জিত করুন
মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের জন্য আপনাকে বেশ কিছু কোডিং বা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে জানতে হবে, যেমন :
- জাভা
- জাভাস্ক্রিপ্ট
- সিহ্যাশ
- সিপ্লাসপ্লাস
- অবজেক্টিভ-সি(Objective-C)
- সুইফট(Swift)
- কটলিন(Kotlin) ইত্যাদি।
আপনাকে অবশ্যই এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলোতে দক্ষতা হতে হবে। কারণ এগুলো ব্যবহার করেই কোডিংয়ের মাধ্যমে আপনাকে অ্যাপ বা সফটওয়্যার তৈরি করতে হবে। তাই আপনাকে অবশ্যই এই বিষয়গুলো ভালো মতো জানতে হবে।
-
অন্যান্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বৃদ্ধি করুন
প্রযুক্তিগত ও তত্ত্বীয় দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা যেমন সৃজনশীলতা বৃদ্ধি, ভালো যোগাযোগের ক্ষমতা তৈরি ইত্যাদি বিষয় নিয়েও কাজ করুন। আপনার প্রযুক্তিগত ও তত্ত্বীয় জ্ঞান অনেক ভালো হলেও আপনি কখনোই একজন সফল মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার হতে পারবেন না, যদি আপনার মধ্যে এই গুণগুলো না থাকে। তাই এই প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো বৃদ্ধির দিকেও জোর দিন।
মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপারের ভবিষ্যৎ বা ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট সেক্টরটি পুরো বিশ্বেরই একটি ক্রমবর্ধমান এবং সম্ভাবনাময় সেক্টর। আপনি যদি নিজেকে একজন সফল মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন সেক্ষেত্রে এই সেক্টরে আপনার কাজের অসংখ্য সুযোগ রয়েছে, যেমন :
-
আইটি ফার্ম (IT Firm)
বিশ্বের অসংখ্য দেশের মতো বর্তমানে বাংলাদেশেও অনেকগুলো আইটি ফার্ম গড়ে উঠেছে। তন্মধ্যে কয়েকটি জনপ্রিয় আইটি ফার্ম ইতিমধ্যেই কয়েক মিলিয়ন ডলার রাজস্ব অর্জন করে ফেলেছে। আপনি যদি একজন সুদক্ষ মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার হয়ে উঠতে পারেন তাহলে আপনি এই দেশী, মাল্টিন্যাশনাল(Multi-national) এমনকি বিদেশী আইটি ফার্মগুলোতেও কাজের সুযোগ পেতে পারেন৷
-
সরকারি প্রজেক্ট
আপনি একজন দক্ষ মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার হয়ে উঠতে পারলে আপনি বিভিন্ন রকম সরকারি প্রজেক্টের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার অনেকগুলো কার্যকরী এবং প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ডেভেলপ করেছে। তন্মধ্যে জনপ্রিয় হলো সুরক্ষা অ্যাপ, যার মাধ্যমে দেশের মানুষজন কোনো রকম পরিশ্রম বা খরচ ছাড়া সহজেই করোনার টিকা নেওয়ার জন্য নিজের নাম নিবন্ধন করতে পারছে।
এছাড়াও অদূর ভবিষ্যতে সরকারের উচ্চ মহলের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারি বেশিরভাগ কর্মকাণ্ডকেই অ্যাপসের আওতায় নিয়ে আসার। সুতরাং, আপনি আপনার যোগ্যতা প্রমাণ করে দেশব্যাপী এই প্রজেক্টগুলোর সাথে আপনিও যুক্ত হতে পারেন।
-
এজেন্সি(Agency)
আপনি নিজেই আপনার কিছু পরিচিত ডেভেলপার তথা সহকর্মী নিয়ে একটি মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি খুলে ফেলতে পারেন৷ দেখা যায় যখন কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোনো ব্যক্তি কোনো সফটওয়্যার বানানোর পরিকল্পনা করে তখন তারা কোনো এজেন্সিকে সেটির দায়িত্ব দিয়ে থাকেন, কারণ তাদের নিজেদের অন্যান্য আরো অনেক রকম প্রজেক্ট বা কাজ থাকে। সুতরাং, আপনি চাইলে আপনার এজেন্সির মাধ্যমে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস বা সেবা দিয়ে, সেখান থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
-
ফ্রিল্যান্সিং
ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলোতেও আপনি ফ্রিল্যান্সার মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার হিসেবে কাজ করতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে আপনি বাংলাদেশ সহ পুরো বিশ্বের ক্লায়েন্ট বা বিশ্বের যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যই আপনি আপনার ঘরে বসেই কাজ করতে পারবেন।
এরকম আরো অসংখ্য কাজের সুযোগ মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট সেক্টরটিতে রয়েছে।
শেষ কথা
মোবাইল অ্যাপস বা সফটওয়্যারগুলো বর্তমানে মানুষের জীবনের সাথে এমনভাবে জড়িয়ে পরেছে যে দিনে দিনে মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এর চাহিদা বাড়ছে। তাই, আপনি যদি গ্রাহকের পছন্দ মোতাবেক এবং ব্যবহার উপযোগী মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে বিশ্বজুড়েই আপনি আপনার কাজের অসংখ্য প্লাটফর্ম খুঁজে পাবেন। আশা করছি আমরা মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট কী এবং আর গুতুত্ব সম্পর্কে ধারণা দিতে পেরেছি।