ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কী? কিভাবে আপনি একজন সফল ওয়েব ডেভেলপার হবেন?
আমরা যারা ওয়েবসাইট কিংবা ওয়েব ডিজাইন নিয়ে কাজ করি, তাদের জন্য ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বা ওয়েব ডেভেলপার শব্দগুলো খুবই পরিচিত। একজন ওয়েব ডেভেলপার কোডিংয়ের মাধ্যমে ওয়েবসাইট এবং ওয়েবসাইটের এপ্লিকেশনগুলো তৈরি করে থাকেন।
কোনো ওয়েবসাইটের ফাংশনালিটি অর্থাৎ ওয়েবসাইটটি কীভাবে কাজ করবে তা নির্ধারণ করে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট৷ আজকে আমরা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কী এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি নিয়ে বিস্তারিত জানবো।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কী?
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে জানতে হলে সর্বপ্রথমেই আমাদেরকে বুঝতে হবে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কী। কোনো ওয়েবসাইটের ভিতরের অদৃশ্যমান অংশ বা অ্যাডমিন কন্ট্রোল প্যানেলের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের বাইরের অংশটি তৈরি করার জন্য বা কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট করার জন্য ওয়েবসাইটের অ্যাডমিন কন্ট্রোল প্যানেলকে ফাংশনাল করার প্রক্রিয়াই হলো ওয়েব ডেভেলপমেন্ট। অর্থাৎ, ওয়েবসাইটের যাবতীয় ফাংশনাল কাজ করার জন্য যে কোডিং করা হয় তাকেই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বলা হয়।
একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো বোধগম্য হবে। আপনি যখন গুগল ব্লগারে লগিন(login) করেন, এরপর আপনি সেখানে ব্লগ সেটিংস(Settings) ও পোস্ট সহ অন্যান্য যে অপশনগুলো দেখতে পান, সেগুলো সবই ওয়েব ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে করা হয়।
তাছাড়া আমরা যখন ওয়ার্ডপ্রেসের বিভিন্ন থিম(Theme) ব্যবহার করি, তখন আমরা ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবো যে, প্রত্যেকটি থিম ইন্সটল(Install) করার পর থিম বা ওয়েবসাইট ডিজাইন করার জন্য অনেকগুলো ফিচার(Feature) বা সেটিংস রয়েছে। এগুলোতে ক্লিক করে সহজেই ওয়েবসাইটের ডিজাইন পরিবর্তন করা যায়। তাছাড়া আপনি ক্লিক এন্ড ড্রাগ ড্রপ করে নিমিষেই ওয়েবসাইটটিকে নিজের মনের মতো সাজিয়ে নিতে পারবেন। এই ক্লিক এন্ড ড্রাগ ড্রপ করা সহ সবগুলো ফাংশনই ওয়েব ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে তৈরি করা হয়।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পার্থক্য
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কী তা আমরা জানলাম। এখন আমরা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পার্থক্য সম্পর্কে জানবো :
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট | সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং |
১. কোনো ওয়েবসাইটের ফাংশনাল কাজ করার জন্য যে কোডিং করা হয় তাকেই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বলা হয়। | ১. সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং হলো এমন এক ধরণের ইঞ্জিনিয়ারিং যেখানে সফটওয়্যার তৈরীর সমস্ত প্ল্যানিং, প্রোগ্রামিং, ডিজাইনিং ও বিশেষণ এবং সফটওয়্যারের যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়৷ |
২. ওয়েব ডেভেলপার দ্বারা পরিচালনা করা হয়। | ২. সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা পরিচালনা করা হয়। |
৩. ওয়েব ডেভেলপমেন্টের মূল উদ্দেশ্য হলো ওয়েবসাইট এবং ওয়েব এপ্লিকেশন তৈরি করা। | ৩. সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মূল উদ্দেশ্য হলো অপারেটিং সিস্টেমের জন্য প্রোগ্রাম তৈরি করা। |
৪. একজন ওয়েব ডেভেলপারের বিশেষত্ব হচ্ছে বিভিন্ন রকম ওয়েব ভিত্তিক এপ্লিকেশন তৈরি করা যেমন : ওয়েবসাইট, ই-কমার্স, মোবাইল ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি। | ৪. সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের বিশেষত্ব হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম, নেটওয়ার্ক বা প্লাটফর্মের জন্য সফটওয়্যার তৈরি করা। |
৫. ওয়েব ডেভেলপাররা মূলত আইটি অথবা মার্কেটিং বিভাগে কাজ করে। | ৫. সফটওয়্যার ডেভেলপাররা মূলত টেকনিক্যাল বিভাগে কাজ করে। |
৬. সমীক্ষা মতে, ওয়েব ডেভেলপারদের বাৎসরিক গড় আয় প্রায় ৭৩,৭৬০ ইউএস ডলার। | ৬. সমীক্ষা মতে, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের বাৎসরিক গড় আয় প্রায় ১,০৭,৫১০ ইউএস ডলার। |
৭. ওয়েব ডেভেলপারদেরকে ব্যবহার উপযোগী ওয়েবসাইট তৈরীর জন্য এইচটিএমএল(HTML), সিএসএস(CSS) এবং জাভা(Java) প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে জানতে হয়। | ৭. সফটওয়্যার ডেভেলপারদেরকে রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট, ডাটা সাইন্স ও মেশিন লার্নিং এর জন্য প্রায় সব রকম প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের ব্যবহার এবং বর্তমানের জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ট্রেন্ডগুলো সম্পর্কে জানতে হয়। |
৮. একটি গবেষণা মোতাবেক, ২০১৯ থেকে ২০২৯ এর মধ্যে ওয়েব ডেভেলপারদের চাকরির সুযোগ ৮% বৃদ্ধি পাবে। | ৮. গবেষণা মতে, ২০১৯ থেকে ২০২৯ এর মধ্যে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির সুযোগ প্রায় ২২% বৃদ্ধি পাবে। |
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কত প্রকার ও কী কী?
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কী, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পার্থক্য সম্পর্কে আমরা জানলাম। এখন আমরা ওয়েব ডেভেলপমেন্টের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানবো। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট মূলত তিন প্রকার, যথা :
- ফ্রন্ট এন্ড বা ক্লায়েন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট
- ব্যাক এন্ড বা সার্ভার এন্ড ডেভেলপমেন্ট
- ফুল স্ট্যাক ডেভেলপমেন্ট
ফ্রন্ট এন্ড বা ক্লায়েন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট
ফ্রন্ট এন্ড বা ক্লায়েন্ট এন্ড ডেভেলপার মূলত ওয়েবসাইটের বাইরের অংশটি ডিজাইন করে থাকেন। একজন ফ্রন্ট এন্ড ওয়েব ডেভেলপারকে যখন কোনো ক্লায়েন্ট কোনো নির্দিষ্ট ডিজাইনের ওয়েবসাইট তৈরি করে দিতে বলেন, তখন তারা ইলাস্ট্রেটর বা ফটোশপের মাধ্যমে প্রথমে সেই ডিজাইনটি তৈরি করেন৷ অতঃপর এইচটিএমএল(HTML) ও সিএসএস(CSS) প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে তারা ওয়েবসাইটের ডিজাইনটি তৈরি করে থাকেন।
ব্যাক এন্ড বা সার্ভার এন্ড ডেভেলপমেন্ট
ব্যাক এন্ড বা সার্ভার এন্ড ডেভেলপমেন্টের জন্য ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরী। কারণ ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট না করে ব্যাক এন্ড ডেভেলপমেন্টের কাজ করা যায় না৷
সাধারণত একজন ব্যাক এন্ড ডেভেলপার ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপারের কাছ থেকে ওয়েবসাইট ডিজাইনের কোডগুলো সংগ্রহ করে সেটির একটি অ্যাডমিন কন্ট্রোল প্যানেল গঠন করেন। অ্যাডমিন কন্ট্রোল প্যানেল গঠিত হয়ে গেলে, ঐ ওয়েবসাইটের ডিজাইন পরিবর্তনের জন্য বা নতুন কোনো পোস্ট লেখার জন্য আর কোডিং করতে হয় না।
ব্যাক এন্ড ডেভেলপমেন্টের কাজ করার জন্য এইচটিএমএল(HTML), জাভাস্ক্রিপ্ট(Java Script), সিএসএস(CSS), পিএইচপি(PHP), পাইথন(PHP) ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরী।
ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপমেন্ট
কোনো ওয়েবসাইট ডিজাইন করা থেকে শুরু করে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের পুরো প্রক্রিয়াটি সমন্বয় করে তা দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করার প্রক্রিয়াই হলো ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপমেন্ট । ফুল-স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপাররা মূলত ওয়েবসাইটের ফ্রন্ট এন্ড(Front End) বা ক্লায়েন্ট সাইড এবং ব্যাক এন্ড(Back End) বা সার্ভার সাইড উভয় বিষয় নিয়েই কাজ করেন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন, ফ্রন্ট এন্ড, ব্যাক এন্ড, ওয়েবসাইটের সার্ভার, গঠন ও কাঠামো তৈরি করা, ডাটাবেজ সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট, ডিবাগিং(Debugging) সবকিছুই একজন ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার একত্রে সম্পাদন করেন।
ওয়েবসাইট মূলত কত প্রকার ও কী কী?
ওয়েবসাইট হচ্ছে কোনো ওয়েব সার্ভারে থাকা ওয়েবপেজ, ইমেজ, অডিও, ভিডিও এবং অন্যান্য ডিজিটাল তথ্য ও উপাত্তের সমষ্টি, যা ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে এক্সেস(Access) করা যায়।
গঠন বৈচিত্র্যের উপর ভিত্তি করে ওয়েবসাইট মূলত দুই প্রকার, যথা :
- স্ট্যাটিক(Static) ওয়েবসাইট
- ডায়নামিক(Dynamic) ওয়েবসাইট
স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট
যে সকল ওয়েবসাইটে ডাটা বা উপাত্তের মান ওয়েবপেজে প্রদর্শিত হওয়ার পর সেগুলো আর পরিবর্তন করা যায় না, তাকে স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট বলা হয়। সাধারণত এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়।
ডায়নামিক ওয়েবসাইট
যে সকল ওয়েবসাইটে ওয়েবপেজে প্রদর্শনের পরেও ডাটা বা উপাত্তের মান পরিবর্তন করা যায়, তাকে ডায়নামিক ওয়েবসাইট বলে। ডায়নামিক ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ যেমন পাইথন(Python), এএসপি(ASP), পিএইচপি(PHP) ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় এবং ওয়েবপেজ ডিজাইনিংয়ের জন্য এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়৷ পাশাপাশি SQL/MySQL ইত্যাদি ডাটাবেজ ল্যাঙ্গুয়েজও ব্যবহার করা হয়।
আবার, অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ওয়েবসাইট মূলত দুই প্রকার, যথা :
- লোকাল ওয়েবসাইট
- রিমোট(Remote) ওয়েবসাইট
তাছাড়া ব্যবহারের ভিত্তিতেও ওয়েবসাইটকে বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়,যথা :
- আর্কাইভ(Archive) ওয়েবসাইট
- ই-কমার্স ওয়েবসাইট
- নিউজ ওয়েবসাইট
- ব্লগ ওয়েবসাইট
- পোর্টফলিও ওয়েবসাইট
- ডাউনলোড ওয়েবসাইট ইত্যাদি।
ওয়েব ডেভেলপমেন্টের জন্য যা যা শেখা জরুরী
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কী, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পার্থক্য, ওয়েব ডেভেলপমেন্টের প্রকারভেদ এগুলো সম্পর্কে আমরা জানলাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ওয়েব ডেভেলপিং শেখার জন্য আমার কী কী বিষয় শেখা জরুরী?
নিম্নে সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো :
-
এইচটিএমএল(HTML)
এইচটিএমএল(HTML) বা হাইপার টেক্সট মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ কোনো ওয়েবসাইটের স্ট্রাকচার(Structure) বা গঠন তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয়। কোনো ওয়েবসাইট, ইউজার(User) বা ব্যবহারকারীর সামনে কীভাবে প্রদর্শিত হবে তা এইচটিএমএল কোডিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। ওয়েব ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রথমেই আপনাকে ওয়েবসাইটটির একটি গঠন তৈরি করতে হবে, যার জন্য সর্বপ্রথমেই আপনাকে এইচটিএমএল কোডিং শিখতে হবে।
-
সিএসএস(CSS)
সিএসএস(CSS) বা ক্যাসকেডিং স্টাইল শিটস(Cascading Style Sheets) হলো এক ধরণের ক্লায়েন্ট সাইড স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ। কোনো ওয়েবসাইটের গঠন তৈরি হওয়ার পর সেই ওয়েবসাইটটিকে ডিজাইন, কালার(Colour) বা রং, আউটলুক ইত্যাদি তৈরি করার জন্য সিএসএস ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়।
-
জাভাস্ক্রিপ্ট(javascript)
জাভাস্ক্রিপ্ট একটি উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। আপনার ওয়েবসাইটকে আরো ইন্টারেক্টিভ(Interactive) এবং কার্যকরী করে তোলার জন্য এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, ইউজার বা ব্যবহারকারীরা যাতে ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করে ভালো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়, সেজন্য জাভাস্ক্রিপ্ট ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়।
-
পিএইচপি(PHP)
পিএইচপি(PHP) বা হাইপারটেক্সট প্রিপ্রসেসর (Hypertext Preprocessor) হচ্ছে এক ধরণের সার্ভার সাইড স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ। ওয়েবসাইটকে ইউনিক করে তোলার জন্য পিএইচপি খুবই কার্যকরী। বিশ্বের বেশিরভাগ বড় বড় ওয়েবসাইটই পিএইচপির উপর নির্ভরশীল। যেমন : ফেসবুক। ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি বৃদ্ধির জন্য পিএইচপি ব্যবহার করা হয়।
তাছাড়া চাকরির বাজারেও পিএইচপির অনেক চাহিদা থাকায়, এই স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানা থাকলে সেখানেও আপনি অনেক সুবিধা পাবেন।
-
ইউআই/ইউএক্স ডিজাইন(UI/UX Design)
ইউআই/ইউএক্স ডিজাইন (UI/UX Design) বা ইউজার ইন্টারফেস/ ইউজার এক্সপিরিয়েন্স ডিজাইন দিয়ে মূলত ইলাস্ট্রেটর, ফটোশপ ইত্যাদি এপ্লিকেশন ব্যবহার করে বিভিন্ন সফটওয়্যার ডিজাইন করা হয়। অনেকেই দেখা যায়, ইউআই/ইউএক্স ডিজাইন শিখলেও কোডিং শিখতে চান না, আবার অনেকে কোডিং শিখলেও, ইউআই/ইউএক্স ডিজাইন শিখেন না। কিন্তু আপনি যদি নিজেকে একজন দক্ষ ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে গড়ে তুলতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে ডিজাইন এবং কোডিং দুটোই শিখতে হবে।
-
গিট(Git)
গিট হচ্ছে একটি ফ্রি এবং ওপেন-সোর্স সফটওয়্যার ভার্সন(Version) কন্ট্রোল সিস্টেম। যেকোনো সফটওয়্যার স্মুথলি(Smoothly) ব্যবহার করার জন্য ঐ সফটওয়্যারটাকে নিয়মিত আপডেট করতে হয়। তাই আপনার তৈরি করা ওয়েবসাইটের ভার্সন কন্ট্রোল করার জন্য আপনার গিট শেখা দরকার। তাছাড়া প্রোগ্রামিং করার জন্যও গিট শেখা জরুরী।
-
ওয়ার্ডপ্রেস(WordPress)
ওয়ার্ডপ্রেস হচ্ছে পিএইচপি এবং মাইএসকিউএল(MySQL) দ্বারা গঠিত একটি ওপেন-সোর্স ব্লগিং সফটওয়্যার। এটি বর্তমানে একটি বহুল জনপ্রিয় ব্লগ পাবলিশিং এপ্লিকেশন এবং একটি শক্তিশালী কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করা, শেখা বা এখানে কোডিং করা অন্যান্য কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমগুলোর চেয়ে অনেক সহজ। যদিও ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে মূলত ব্লগ বানানো হয়, কিন্তু এখানে প্রচুর প্লাগিন রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে ই-কমার্স সাইট, ফোরাম ইত্যাদি তৈরি করা যায়।
-
এসইও(SEO)
একজন ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য আপনার বেসিক এসইও(SEO) বা সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন শিখে রাখা জরুরী৷ আপনি যদি কোনো ক্লায়েন্ট বা প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করেন, সেক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই সেটিকে এসইও ফ্রেন্ডলি করতে হবে, যেন গুগল র্যাঙ্কিংয়ে ওয়েবসাইটটি উপরের দিকে চলে আসে। তাই এসইও ফ্রেন্ডলি এইচটিএমএল(HTML) ট্যাগগুলো আপনার কোথায় ব্যবহার করতে হবে, সে বিষয়ে আপনার ধারণা থাকতে হবে।
-
ফটোশপ(Photoshop)
আপনার ওয়েবসাইটের ডিজাইনিং, এডিটিং(Editing) ও স্টাইলিংয়ের(Styling) এর জন্য আপনাকে অবশ্যই ফটোশপের সাহায্য নিতে হবে। আপনি যখন কোনো ওয়েবসাইট ডিজাইন করবেন আপনাকে সেটা প্রথমে ফটোশপে খসড়া করে নিতে হবে। অতঃপর সেটিকে কোডিংয়ের মাধ্যমে আপনি ওয়েবসাইটের ডিজাইনটি তৈরি করতে পারবেন।
কীভাবে আপনি একজন সফল ওয়েব ডেভেলপার হবেন?
একজন সফল ওয়েব ডেভেলপার হওয়ার জন্য আপনাকে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। নিম্নে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো :
ওয়েব ডেভেলপমেন্টের বেসিক বা মূল বিষয়গুলো জানতে হবে
একজন সফল ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের একদম মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে হবে। সেগুলো হলো :
- ওয়েবসাইট
- আইপি এড্রেস(IP Address)
- এইচটিটিপি(HTTP)
- কোডিং
- ফ্রন্ট এন্ড
- ব্যাক এন্ড
- সিএমএস(CMS)
- সাইবারসিকিউরিটি(Cybersecurity)
ওয়েব ডেভেলপমেন্টের জন্য দরকারী প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ও অন্যান্য দক্ষতাগুলো জানতে হবে
ওয়েব ডেভেলপমেন্টের মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার পর অতঃপর আপনাকে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ও অন্যান্য দক্ষতাগুলো শিখতে হবে। যেমন :
- এইচটিএমএল(HTML)
- সিএসএস(CSS)
- জাভাস্ক্রিপ্ট(Javascript)
- পিএইচপি(PHP)
- ইউআই / ইউএক্স ডিজাইন (UI/UX Design)
- গিট(Git)
- ওয়ার্ডপ্রেস(WordPress)
- এসইও(SEO)
- ফটোশপ(Photoshop) ইত্যাদি।
নিজেকে একজন সফল ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে হবে।
আপনার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নতুন নতুন প্রজেক্টে কাজ করুন
আপনি যদি কোনো কিছু ভালো মতো শিখতে চান বা সেখানে উন্নতি করতে চান, সেক্ষেত্রে চর্চার কোনো বিকল্প নেই। ওয়েব ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি তাই। আপনার উন্নতির জন্য আপনাকে প্রচুর চর্চা করতে হবে আর বিভিন্ন রকম প্রজেক্টে কাজ করতে হবে।
সেটা হতে পারে আপনার নিজের প্রজেক্ট বা অন্য কারো। যেমন আজকে চিন্তা করলেন যে এরকম কিছু করার চেষ্টা করবেন, আবার আরেকদিন অন্য রকম কিছু করলেন। এভাবে নিজের প্রজেক্টে নিজেই কাজ করুন। এতে আপনার নিজের দক্ষতাই বাড়বে।
তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলোতে প্রায়ই দেখা যায় বিভিন্ন ক্লায়েন্টরা নিজেদের প্রজেক্টের জন্য ওয়েব ডেভেলপার খুঁজে থাকেন। আপনি তাদের প্রজেক্টেও কাজ করে নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার পারিশ্রমিক মূখ্য নয়, বরং আপনার চর্চা ও শেখাটাই মূল উদ্দেশ্য।
নিজের ওয়েব ডেভেলপমেন্ট পোর্টফলিও তৈরি করুন
একজন সফল ওয়েব ডেভেলপার হওয়ার জন্য আপনার একটি সুন্দর, সাজানো-গোছানো পোর্টফলিও থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যখন আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানে বা ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে কাজের জন্য আবেদন করবেন, তখন সবার আগে তারা আপনার পোর্টফলিও দেখতে চাইবে। আপনার পোর্টফলিও পছন্দ হলে তবেই আপনি পরের ধাপের জন্য উত্তীর্ণ হবেন, অন্যথায় হয়তো আপনাকে মনোনীত করা নাও হতে পারে।
তাই আপনার পোর্টফলিও যাতে সুন্দর এবং গোছানো থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আপনার যদি ইতিপূর্বে কোনো রকম ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তাহলে সেটা অবশ্যই পোর্টফলিওতে অন্তর্ভুক্ত করবেন। তাছাড়া আপনার দক্ষতা, বিশেষত্ব সবকিছুই পোর্টফলিওতে সুন্দর করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবেন। পোর্টফলিও পছন্দ হলে আপনার কাজ পাওয়ার সুযোগটিও বৃদ্ধি পাবে।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কীভাবে শিখবেন?
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কী, কত প্রকার, কীভাবে আপনি একজন সফল ওয়েব ডেভেলপার হবেন এই বিষয়গুলো আমরা জানলাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট আমরা শিখবো কীভাবে?
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শেখার সহজ কয়েকটি উপায় রয়েছে। সেগুলো হলো :
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ফ্রি কোর্স করা৷
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট পেইড কোর্স করা।
- ইউটিউবে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট টিউটোরিয়াল দেখা।
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ব্লগ পড়া।
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ভিত্তিক বই পড়া।
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ভিত্তিক ই-বুক(E-Book) বা পিডিএফ(PDF) পড়া।
আপনি এগুলোর যেকোনোটা অনুসরণ করেই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে পারেন। তবে সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর উপায় হলো ওয়েব ডেভেলপমেন্ট পেইড কোর্স করা এবং ইউটিউবে ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখা।
২০২২ সালে এসে আপনার ওয়েব ডেভেলপার হওয়া উচিত হবে কি?
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কী, এর প্রকারভেদ, কীভাবে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে হবে, কীভাবে একজন সফল ওয়েব ডেভেলপার হওয়া যায় সবকিছুই আমরা জানলাম। এখন একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, এই ২০২২ সালে এসে আপনার ওয়েব ডেভেলপার হওয়া উচিত হবে কি? এক বাক্যে বললে “হ্যা,অবশ্যই”।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শাখাটি তুলনামূলক নতুন হওয়ায়, এটি এখনো ওয়েব ডিজাইন বা অন্যান্য ক্ষেত্রগুলির মতো এতোটা জনপ্রিয় হয় নি। যার কারণে ওয়েব ডেভেলপারের সংখ্যাও অনেক কম। কিন্তু কাজ তো থেমে নেই। কাজ কাজের গতিতেই এগোচ্ছে। এই কারণে গোটা বিশ্বজুড়ে আজ ওয়েব ডেভেলপারের প্রচুর চাহিদা।
বিশ্বের নানা প্রান্তের ক্লায়েন্টরা তাদের প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিগত প্রজেক্টের জন্য প্রতিনিয়তই ওয়েব ডেভেলপার খুঁজে থাকেন। তাই আপনি যদি নিজেকে একজন দক্ষ ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন তাহলে পুরো বিশ্বেই আপনার কাজের অনেকগুলো ক্ষেত্র তৈরি হবে।
তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলোতেও অনেক ক্লায়েন্ট প্রতিনিয়ত ওয়েব ডেভেলপার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকেন৷ আপনি সেখানে আবেদন করেও কাজ পেতে পারেন। যেহেতু পুরো বিশ্বেই ওয়েব ডেভেলপারের সংখ্যা সীমিত, তাই সহজেই কাজ পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিংয়ে আয়ও তুলনামূলক বেশি হয়।
বর্তমানে বিশ্বের ওয়েব ডেভেলপারদের বাৎসরিক গড় বেতন প্রায় ৭৪,০০০ ইউএস ডলার, যা অদূর ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। তাছাড়া আপনার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার উপর পদোন্নতি, কাজের ক্ষেত্র ও উপার্জন বাড়ার সুযোগ তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে বলা যায়, ২০২২ আপনার জন্য ওয়েব ডেভেলপার হওয়ার একটি আদর্শ সময়।
শেষ কথা
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কী এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে আমরা বিস্তারিত জানলাম। বর্তমানে ওয়েবসাইট ও ওয়েব ডিজাইনের সাথে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এমন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে আজ ওয়েব ডেভেলপারদের চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আপনার যদি ওয়েব ডেভেলপিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা থাকে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, আপনার জন্য একটি অসাধারণ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।
Pingback: ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট কী? কিভাবে একজন ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপার হবেন?
KOB balo