গাইডব্লগ

গ্রাফিক্স ডিজাইন কী? গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে কিভাবে আয় করবেন?

বর্তমান সময়ে “গ্রাফিক্স ডিজাইন” শব্দটির সাথে পরিচিত নয় এমন মানুষ খুব একটা পাওয়া যাবেনা৷ আমাদের চারপাশের অনেককিছুই যেমন ব্যানার বা পোস্টার ডিজাইন, টি-শার্ট বা পোলো-শার্ট ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, ভেক্টর আর্ট এই সবকিছুই হলো গ্রাফিক্স ডিজাইনের অবদান। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই গ্রাফিক্স ডিজাইনের বিপুল চাহিদা রয়েছে। আজকে আমরা আপনাদেরকে গ্রাফিক্স ডিজাইন কী এবং এর বৃত্তান্ত সম্পর্কে জানাতে চেষ্টা করবো।

সূচিপত্র

গ্রাফিক্স ডিজাইন কী?

গ্রাফিক্স ডিজাইন কী

গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই আমাদেরকে বুঝতে হবে গ্রাফিক্স ডিজাইন কী। সহজভাবে বললে, গ্রাফিক্স ডিজাইন হলো এমন একটি আর্ট বা শিল্প যেখানে একজন শিল্পী বা ডিজাইনার তার কল্পনা, সৃজনশীলতা, চিন্তাধারা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে কোনো ছবি(Image), ভিডিও(Video), শব্দ(Words), টেক্সট(Text) ও ধারণার(Idea) সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং নতুন একটি ডিজাইন তৈরি করাকে বলা হয় গ্রাফিক্স ডিজাইন।

অর্থাৎ, গ্রাফিক্স ডিজাইন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া বা কৌশল যার মাধ্যমে আমরা আমাদের ধারণা বা জ্ঞানকে ব্যবহার করে বিভিন্ন রকমের ভিজুয়াল কনসেপ্ট(Visual Concept) তৈরি করতে পারি। এই গ্রাফিক্স ডিজাইন, বিজ্ঞাপন বা প্রচার-প্রচারণা, ম্যাগাজিন, বই, ওয়েবসাইট বা লোগো ডিজাইন সহ বিভিন্ন রকম কাজে ব্যবহার করা হয়।

গ্রাফিক্স ডিজাইন মূলত ম্যানুয়ালি(Manually) বা হাতে এঁকে এবং কম্পিউটারাইজড(Computerized) পদ্ধতিতে দুইভাবেই করা যায়। একসময় যখন কম্পিউটারের এতোটা প্রচলন ছিলো না, তখন মানুষ হাতে একেই ডিজাইন করতো। তবে প্রযুক্তির অগ্রগতিতে এখন গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পূর্ণই কম্পিউটার কেন্দ্রিক হয়ে গেছে।

অর্থাৎ, আজকাল কম্পিউটার সফটওয়্যার(Software) বা অ্যাপ্লিকেশন(Application) ব্যবহার করেই গ্রাফিক্স ডিজাইন করা হয়। সুতরাং, প্রযুক্তির সাথে তাল মেলাতে এবং প্রফেশনাল ও এডভান্সড লেভেলের(Advanced Level) কাজ করতে চাইলে আপনার উচিত কম্পিউটার সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে গ্রাফিক ডিজাইনিং করা।

অবশ্যই পড়বেন: ইমেইল মার্কেটিং কী

গ্রাফিক্স ডিজাইন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

গ্রাফিক্স ডিজাইন কী তা আমরা বুঝতে পারলাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমি গ্রাফিক্স ডিজাইন কেন করবো? অর্থাৎ, এর গুরুত্ব কী? আসলে বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইন আমাদের জন্য অনেক দরকারী, কারণ :

  • গ্রাফিক্স ডিজাইনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের মাধ্যমে আপনি দেশে-বিদেশে ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
  • ঘরে বসেই কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
  • নিজের প্রতিভা দেখানোর এবং বিকাশের সুযোগ পাওয়া যায়। 
  • গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ে কাজের ক্ষেত্র এবং আয়ের পরিমাণ – দুটোই অনেক বেশি। 
  • এটি একটি সৃজনশীল পেশা। এখানে মূখস্ত বিদ্যা বা কপি(Copy) করার কোনো সুযোগ নেই। যা করার আপনার নিজের দক্ষতা ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে করতে হবে। অর্থাৎ, আপনার সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর একটি ভালো ক্ষেত্র হলো গ্রাফিক্স ডিজাইন৷ 
  • সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করা যায়।
  • ভালো মতো গ্রাফিক্স ডিজাইনিং শিখতে পারলে দেশি-বিদেশি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ও অফলাইনে চাকুরীর সুযোগ রয়েছে। 
  • আপনি কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা সংস্থার সাথে যুক্ত না হয়েও নিজের তৈরি করা ডিজাইন বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। 
  • গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে খুব বেশি ট্রেনিং কিংবা উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজন নেই। কাজ করতে করতে এবং নিয়মিত চর্চা করলে, নিজ থেকেই অনেক কিছু আয়ত্ত করা যায়৷ 
  • ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা, পণ্য বা সেবার মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের আশ্রয় নিয়ে থাকেন৷ 

এরকম আরো অসংখ্য কারণে বর্তমানে আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের প্রয়োজন হয়।

গ্রাফিক্স ডিজাইনের ব্যবহার

গ্রাফিক্স ডিজাইনের ব্যবহার

গ্রাফিক্স ডিজাইন কী এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা জানলাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গ্রাফিক্স ডিজাইন কোথায় কোথায় ব্যবহার করা হয় বা এর ব্যবহার ক্ষেত্র কোনগুলো?

নিম্নে গ্রাফিক্স ডিজাইনের ব্যবহার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো :

ব্র্যান্ড ডিজাইন

কোনো পণ্যের প্রমোশন, বিজ্ঞাপন বা প্রচার-প্রচারণা গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর জন্য তার ব্র্যান্ডিং ডিজাইন করা হয়। এর মাধ্যমে পণ্যটির উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার একটি বাণিজ্যিক লক্ষ্য পূরণ হয়। আর এই ব্র্যান্ডিং ডিজাইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করা হয় গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে।

মার্কেটিং ডিজাইন

একজন মার্কেটার তার পণ্যের আকর্ষণীয় মার্কেটিং করার জন্য গ্রাফিক ডিজাইনিং করে থাকেন। মূলত মার্কেটিং দেখে যেতে গ্রাহক আগ্রহী হয় এবং পণ্যটি ক্রয় করতে উৎসাহিত হয়, এজন্যই এই ডিজাইনটি করা হয়।

ওয়েব ডিজাইন

আপনি হয়তো ভেবে অবাক হবেন যে এটাতো ওয়েব ডিজাইনারের কাজ, এখানে গ্রাফিক্স ডিজাইনারের কী ভূমিকা থাকতে পারে? আসলে একজন ওয়েব ডিজাইনার আপনার ওয়েবসাইটের জন্য কোডিং করে একটি ওয়ানডে(One Day) তৈরি করেন। কিন্তু এর আগে ওয়েবসাইটটির ডিজাইন কেমন হবে সেটা পুরোপুরি ঠিক করেন একজন গ্রাফিক ডিজাইনার।

ইলাস্ট্রেশন(Illustration) ডিজাইন

সম্ভবত গ্রাফিক ডিজাইন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ইলাস্ট্রেশনেই। সেটা হতে পারে মোশন গ্রাফিক্স, ভিডিও গেমস, টেকনিক্যাল ইলাস্ট্রেশন, কনসেপ্ট আর্ট, টি-শার্ট ডিজাইন, গ্রাফিক নোভেলস(Novels) ইত্যাদি ক্ষেত্রে।

টাইপোগ্রাফিক(Typographic) ডিজাইন

টাইপোগ্রাফিক ডিজাইন বলতে মূলত অক্ষরের বিন্যাসগুলোর ডিজাইনকে বোঝানো হয়। কোনো মেসেজ(Message) বা বার্তাকে অল্প সময়ে এবং সহজে দর্শকের কাছে পৌঁছানোর কার্যকরী একটি মাধ্যম হচ্ছে টাইপোগ্রাফি। মেসেজটি কতটুকু কার্যকর হবে তা নির্ভর করছে ফন্ট কালার, ফন্ট সাইজ আর ফন্ট স্পেসিংয়ের উপর৷ আর এই কাজগুলো করা হয় গ্রাফিক ডিজাইনিংয়ের মাধ্যমে৷

ইনফোগ্রাফিক(Infographic) ডিজাইন

ইনফোগ্রাফিক ডিজাইন হলো এমন কিছু গ্রাফিক্স বা ইমেজ(Image) যেখানে আলাদা করে কিছু টেক্সট(Text) যেমন জরুরি পরিসংখ্যান, গ্রাফ(Graph), চার্ট(Chart) ইত্যাদি যোগ করে প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করা হয়৷

ইনফোগ্রাফিক্সকে গ্রাফিকাল ভিজুয়াল রিপ্রেজেন্টেশনসও(Graphical Visual Representations) বলা হয় যেখানে তথ্য ও উপাত্তগুলো মানুষকে অল্প সময়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করা হয় গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের মাধ্যমে।

টেক্সটাইল অথবা সারফেস ডিজাইন (Textile Or Surface Design)

টেক্সটাইল অথবা সারফেস ডিজাইন হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইনের বিশাল ক্ষেত্রগুলোর একটি৷ পোশাক তৈরির জন্য ফেব্রিক প্যাটার্ন তৈরি ও প্রিন্ট করা থেকে শুরু করে ঘরবাড়ির ডেকোরেশনসহ অন্যান্য আরো অনেক কিছুই এর অন্তর্ভুক্ত।

প্যাকেজিং(Packaging) ডিজাইন

কোনো পণ্যের প্যাকেজিংয়ের বাহ্যিক দিকটি তৈরিতে যে ডিজাইন করা হয়, তাকেই বলা হয় প্যাকেজিং ডিজাইন। যেমন লেবেল, স্টীকার ইত্যাদি৷ এটি শুধুমাত্র পণ্য রক্ষার মাধ্যম নয়, মার্কেটিংয়েরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, যা করা হয় গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে।

প্রোডাক্ট(Product) ডিজাইন

কোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্যের মার্কেটিংয়ের জন্য যে ডিজাইনগুলো তৈরি করা হয় তাকে বলা হয় প্রোডাক্ট ডিজাইন। এই কাজটি করে থাকে গ্রাফিক ডিজাইনার। প্রোডাক্ট ডিজাইনিংয়ের জন্য গ্রাফিক ডিজাইনারের ঐ পণ্য সম্পর্কে জ্ঞান এবং কীভাবে ইলাস্ট্রেশন বা ডিজাইন করলে তা গ্রাহকের কাছে আকর্ষণীয় মনে হবে সে সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি।

এগুলো ছাড়াও আরো অসংখ্য ক্ষেত্রেই গ্রাফিক্স ডিজাইন ব্যবহার করা হয়।

অবশ্যই পড়বেন: কন্টেন্ট মার্কেটিং কী?

কীভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হবেন?

কীভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হবেন

গ্রাফিক্স ডিজাইন কী, এর গুরুত্ব ও প্রয়োগ সম্পর্কে আমরা জানলাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে গ্রাফিক ডিজাইনিং শেখার জন্য আপনাকে কী করতে হবে? ভালো একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হওয়ার জন্য আপনাকে নিম্নোক্ত ধাপগুলো ঠিক মতো অনুসরণ করতে হবে :

গ্রাফিক্স ডিজাইনের নীতিগুলো শিখুন

গ্রাফিক্স ডিজাইনের বেশ কয়েকটি মূলনীতি রয়েছে, সেগুলো হলো :

  • ব্যালেন্স(Balance) বা সমতা 
  • কনট্রাস্ট(Contrast) বা বৈপরীত্য 
  • এম্ফাসাইজ(Emphasize) বা গুরুত্ব 
  • মুভমেন্ট(Movement) বা গতিবিধি
  • প্রোপোর্শন(Proportion) বা অনুপাত
  • রিদম(Rhythm)

আপনি যদি একজন সফল গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই এই নিয়মনীতিগুলো মেনে চলতে হবে। এই মূলনীতিগুলো যেকোনো ডিজাইনকে স্থিতিশীলতা দেয় এবং একটা সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও কাঠামোর মাঝে রাখতে সাহায্য করে।

গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্সে ভর্তি হন

ভালো গ্রাফিক ডিজাইনার হতে হলে আপনাকে ভালো মতো গ্রাফিক্স ডিজাইনিং শিখতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং কোর্স। অনলাইন ও অফলাইনে গ্রাফিক্স ডিজাইনের পেইড, আনপেইড অনেক রকমের কোর্স রয়েছে। আপনি আপনার সুবিধা মতো যেকোনো রকম কোর্সই করতে পারবেন।

অনলাইনে বিশ্বের অনেক নামকরা লার্নিং প্লাটফর্ম যেমন কোর্সেরা(Coursera), ইউডেমিতে(Udemy) অনেকগুলো গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স রয়েছে। আপনি যদি ইংরেজিতে দক্ষ হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি বিশ্বমানের এই কোর্সগুলো করে গ্রাফিক্স ডিজাইন বিষয়টি ভালো মতো আয়ত্ত করতে পারবেন। এই প্লাটফর্মগুলো কখনো কখনো ফ্রিতেও সম্পূর্ণ কোর্স করার সুযোগ দেয়। এই সুবিধাটি নেওয়ার জন্য আপনাকে নিয়মিত তাদের ওয়েবসাইটে নজর রাখতে হবে৷

গ্রাফিক্স ডিজাইন টুলসের(Tools) এর ব্যবহার শিখুন

গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের জন্য জনপ্রিয় অঅনেকগুলো টুল রয়েছে, যেমন :

  • ক্যানভা(Canva)
  • অ্যাডোব ফটোশপ(Adobe Photoshop)
  • অ্যাডোব ইলাস্ট্রেটর(Adobe Illustrator)
  • অ্যাডোব স্পার্ক(Adobe Spark)
  • পিক্সলার(Pixlr)
  • অ্যাফিনিটি ডিজাইনার(Affinity Designer)
  • ডিজাইনবোল্ড(Designbold)
  • ফিগমা(Figma)
  • অ্যাডোব ক্রিয়েটিভ ক্লাউড(Adobe Creative Cloud)
  • ডিজাইন উইজার্ড(Design Wizard)
  • স্কেচবুক(Sketchbook) ইত্যাদি।

এগুলো ছাড়াও আরো অনেকগুলো জনপ্রিয় গ্রাফিক্স ডিজাইনিং সফটওয়্যার বা টুল রয়েছে। যদি আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ে ভালো একটি ক্যারিয়ার গড়তে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে এই টুলগুলোর সঠিক ব্যবহার জানা জরুরী। বিশেষ করে অ্যাডোব ইলাস্ট্রেটর, অ্যাডোব ফটোশপ, ক্যানভা এই রকম বেসিক(Basic) টুলগুলোর যথাযথ প্রয়োগ জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিজেকে সফল একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং টুলগুলো ভালো মতো আয়ত্ত করে ফেলুন।

দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আপনার নিজের প্রজেক্টে কাজ করুন

ইংরেজিতে একটি কথা আছে, “Practice makes a man perfect”। অর্থাৎ, অনুশীলন একজন মানুষকে নিখুঁত করে তোলে। বাস্তবিকই তাই। আপনার নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত চর্চার কোনো বিকল্প নেই।

আসলে গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স করে বা ইউটিউব দেখে বা কারো থেকে সাহায্য বা ট্রেনিং নিয়ে শিখলে যতটুকু শেখা যায়, আপনি নিজে নিজে চর্চা করলে এর থেকে ভালো মতো শিখতে পারবেন। তাই বেশি বেশি মানুষের কাজ দেখার পাশাপাশি নিজেও বেশি বেশি চর্চা করুন।

অনুশীলনের জন্য নিজে নিজেই বিভিন্নরকম প্রজেক্ট হাতে নিন। যেমন চিন্তা করলেন, আজকে একটা ঘরের ডেকোরেশন কেমন হবে তা ডিজাইন করবেন। ভালো হোক, খারাপ হোক চেষ্টা করুন। আজ ভালো হয় নি, কাল হবে। কিন্তু চেষ্টা করে যেতে হবে। চর্চা চালিয়ে গেলে আর নিষ্ঠার সাথে লেগে থাকলে অবশ্যই আপনি উন্নতি করতে পারবেন।

পোর্টফলিও(Portfolio) তৈরি করুন

পোর্টফলিও হচ্ছে অনেকগুলো উপাদানের সংকলন যা থেকে আপনার দক্ষতা, যোগ্যতা, শিক্ষা, ট্রেনিং, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ে ভালো একটি ক্যারিয়ার গড়তে চান, সেক্ষেত্রে আপনার ভালো একটি পোর্টফলিও থাকা খুবই জরুরী। কারণ আপনার পোর্টফলিওই আপনার পরিচয় বহন করে। পোর্টফলিও দেখে পছন্দ হলে আপনাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ক্লায়েন্ট কাজ দিবে। তাই দ্রুতই একটি পোর্টফলিও তৈরি করে ফেলুন।

আপনি হয়তো অনেক ভালো কাজ করেন, কিন্তু আপনার পোর্টফলিও যদি স্পষ্ট না হয় বা তা থেকে যদি আপনার কাজের ব্যাপারে ধারণা পাওয়া না যায়, তাহলে হয়তো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজ দিতে দ্বিধা বোধ করবে। তাই আপনার পোর্টফলিওটি যেনো স্পষ্ট হয় এবং সেখানে যেনো প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দেওয়া থাকে সেদিকে আপনার নজর রাখতে হবে।

সুতরাং, সফল একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে হলে উপরিউক্ত বিষয়গুলো মেনে চলা অবশ্যম্ভাবী।

অবশ্যই পড়বেন: সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কী?

গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে কীভাবে আয় করবেন?

গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে কীভাবে আয় করবেন

গ্রাফিক্স ডিজাইন কী, এর গুরুত্ব, ব্যবহার, কীভাবে সফল গ্রাফিক ডিজাইনার হওয়া যায় এই বিষয়গুলো আমরা জানলাম। এখন আমএয়া জানবো কীভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং করে আয় করা যায় :

লোগো(Logo) ডিজাইন করে

যেকোনো ব্যবসার ব্র্যান্ডশীপ তৈরি করার জন্য লোগোর কোনো বিকল্প নেই। আপনি কোনো স্টার্টআপ(Start-up) নিয়ে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে চাইলে, শুরুতেই আপনাকে একটি লোগো তৈরি করতে হবে। আর এই লোগো তৈরীর কাজটি করে থাকেন গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা।গ্রাফিক্স ডিজাইনের অনেকগুলো ক্ষেত্রর মধ্যে অন্যতম হলো লোগো ডিজাইন।

ফেসবুক, গুগল, পিন্টারেস্ট, ইন্সটাগ্রাম, টুইরারের মতো জনপ্রিয় প্লাটফর্মগুলোকে আমরা যেমন লোগো দেখেই চিনে ফেলতে পারি, তেমনি একটি প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়াতে লোগো অনেক জরুরী।

তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা বা সংগঠনের প্রায়ই নিজেদের কর্মকান্ড এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য লোগোর প্রয়োজন হয়। তখন তারা এমন ডিজাইনারদের খোঁজ করে থাকেন যারা তাদের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট এবং সেরা ডিজাইনটি করে দিতে পারবেন। আপনি যদি নিজেকে ভালো একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন, তাহলে তারা আপনার পোর্টফলিও দেখে আপনাকেও কাজটি দিতে পারে।

আর আপনার কাজ দিয়ে আপনি তাদের সন্তুষ্ট করতে পারলে তারা আপনাকে ভালো মানেরই অর্থ দিবে। পাশাপাশি আপনার কাজ পছন্দ হলে আপনাকে তাদের স্থায়ী ডিজাইনার হিসেবেও নিয়োগ দিতে পারে। এভাবে সেখান থেকে আপনি অনেক আয় করতে পারবেন।

তাছাড়া আপনি ফ্রিল্যান্সিং সাইট যেমন ফাইভার.কম(Fiverr.com), ফ্রিল্যান্সার.কম(Freelancer.com), আপওয়ার্ক.কম(Upwork.com) ইত্যাদি সাইটেও লোগো ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে পারবেন। আপনি দেখবেন প্রায়ই দেশী-বিদেশি অসংখ্য মানুষ এসব সাইটে লোগো ডিজাইনার চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়। আপনার পোর্টফলিও দেখে তারা আপনাকে বেছে নিলে, সেখান থেকেও আপনি আয় করতে পারবেন। এভাবে ঘরে বসেই আপনি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকেই আয় করতে পারবেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।

এর বাইরেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ লোগো ডিজাইনার চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেন৷ আপনি সেখান থেকেও কাজ পেতে পারেন। আপনার কাজ তাদের পছন্দ হলে সেখান থেকেও আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

ওয়েব ডিজাইন করে

মূলত ওয়েবসাইট ডিজাইন করে তিনভাবে অর্থ উপার্জন করা যায়৷ একটি হচ্ছে, কোনো ওয়েবসাইটের সাথে সরাসরি কাজ করে, আরেকটি হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং করে, আর অপরটি হচ্ছে নিজের ওয়েবসাইট খুলে।

একটি ওয়েবসাইটের ডিজাইন কেমন হবে, কীভাবে হবে সেই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করেন একজন গ্রাফিক ডিজাইনার। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই দেখা যায়, আলাদা করে ওয়েব ডিজাইনার থাকলেও গ্রাফিক ডিজাইনার খুব একটা থাকে না। সেক্ষেত্রে তাদের আলাদা করে গ্রাফিক্স ডিজাইনার নিয়োগ দিতে হয়৷ আপনার সিভি(CV) এবং পোর্টফলিও দেখে যদি তারা আপনাকে নিয়োগ দেন, সেক্ষেত্রে আপনি কাজটি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। আর নিজের কাজ যদি তাদের সন্তুষ্ট করতে পারলে পরবর্তীতেও তাদের ডিজাইনার প্রয়োজন হলে আপনার কথাই তাদের মনে পরবে।

এছাড়াও আপনি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলোতে ওয়েব ডিজাইন করে সেখান থেকেও অর্থ উপার্জন করতে পারেন। কিন্ত এই ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হচ্ছে, আপনি যখন কোনো ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে কাজ করবেন, তখন ঐ ওয়েবসাইটগুলো আপনার থেকে একটি নির্দিষ্ট অর্থ কেটে রাখবে। কিন্তু যদি আপনি আপনার নিজের ওয়েবসাইট খুলেন এবং সেখানে ওয়েব ডিজাইনিং সেবা দেওয়া চালু করেন সেক্ষেত্রে পুরো অর্থটাই আপনার কাছে থাকছে।

আপনি বিভিন্ন রকম গিফট ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে আপনার ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়াতে পারেন। তাছাড়া প্রথম প্রথম সেবা দেওয়ার সময় আপনি কিছুটা ডিসকাউন্ট দিতে পারেন। পরবর্তীতে তার কয়েকগুণ আপনি ফেরত পাবেন।

আপনার কাজ মানুষকে দেখাতে আপনি বেশ কিছু লাইভ ক্লাস নিতে পারেন। তাছাড়া আপনি অনলাইন ক্লাস বা অনলাইন কোর্সের আয়োজন করে সেগুলো বিক্রি করেও অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি(Brand Identity) ডিজাইনার হিসেবে

যেকোনো ব্যবসার বিশেষ করে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ব্র্যান্ডিং কিংবা ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি তৈরি হওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সাধারণত ব্র্যান্ডিং ডিজাইন বলতে মার্চেন্ডাইজ(Merchandise) বা পণ্য ডিজাইন, লোগো ডিজাইনিং, বিজনেস কার্ড ডিজাইনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো ডিজাইন করাকে বোঝানো হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করতে গ্রাফিক ডিজাইনিং দক্ষতার প্রয়োজন হয়।

সাধারণত এই কাজগুলোর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদা করে গ্রাফিক্স ডিজাইনার রাখেনা, কারণ তা কিছুটা ব্যয়বহুল। সেক্ষেত্রে তারা গ্রাফিক ডিজাইনার নিয়োগ দেন বা ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলোতে গ্রাফিক্স ডিজাইনার চেয়ে পোস্ট দেন। সেখানে আপনার পোর্টফলিও দেখিয়ে আপনি খুব সহজেই কাজটি পেয়ে যেতে পারেন। আর আপনার কাজে তারা মুগ্ধ হলে দেখা যাবে পরবর্তীতে তারা যখন কোনো ব্র্যান্ড বানাবে, সেটার আইডেন্টিটি ডিজাইনিং এর দায়িত্বও আপনিই পেয়েছেন।

ফ্রিল্যান্সিং করে

গ্রাফিক ডিজাইনের সর্ববৃহৎ ক্ষেত্র খুব সম্ভবত ফ্রিল্যান্সিং। আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গ্রাফিক ডিজাইনিং করতে চাইলে আপনার হাতে অসংখ্য বিকল্প রয়েছে। আপনি ওয়েব ডিজাইনিং করে, ম্যাগাজিন বা বুক কভার (Book Cover) ডিজাইন করে, টি-শার্ট বা লোগো ডিজাইন করে, ভেক্টর আর্ট করে, বিজনেস, ইনভাইটেশন বা ভিজিটিং কার্ড তৈরি করা সহ আরো অনেকভাবেই আপনি গ্রাফিক ডিজাইনিং করে অর্থ আয় করতে পারেন।

এখন কথা হচ্ছে, একসাথে এতোগুলো কাজ আপনি একত্রে কোথায় পাবেন? এর উত্তর হচ্ছে একসাথে এতোগুলো কাজ আপনি কেবলমাত্র ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটেই পেতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলোতে এতো এতো কাজ রয়েছে যে আপনি আপনার নিজের দক্ষতা ও সুবিধা অনুযায়ী যেটা বা যেগুলো ইচ্ছে, সেটা বা সেগুলোই বেছে নিতে পারবেন।

বিশ্বে জনপ্রিয় অনেকগুলো ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট রয়েছে, যেমন :

  • ফ্রিল্যান্সার.কম(Freelancer.com)
  • ফাইভার.কম(Fiverr.com)
  • আপওয়ার্ক.কম(Upwork.com)
  • পিপলপারআওয়ার.কম(PeoplePerHour.com)
  • নাইন্টিনাইনডিজাইনস.কম(99designs.com) ইত্যাদি

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করার জন্য আপনার এই ওয়েবসাইটগুলোর যেকোনো একটি বা একাধিক ওয়েবসাইটে একাউন্ট খুলতে হবে। তারপর আপনি সেখানে দেখবেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ক্লায়েন্ট বা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজ নিজ কাজের জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনার চেয়ে পোস্ট দিয়েছেন। আপনার পারিশ্রমিক, বিশেষত্ব, কাজের ধরণের উপর আপনি কাজ বাছাই করে নিতে পারবেন আর সেখান থেকে আয় করতে পারবেন৷

অ্যানিমেশন(Animation) ডিজাইনার হিসেবে

প্রায় ২৫ বছর অ্যানিমেটেড ইমেজেসের রাজত্ব চললেও বিগত তিন-চার বছরে তা অন্য মাত্রায় চলে গেছে। আজকাল ডিজিটাল কমিউনিকেশনে প্রায় সবাইই স্টোরি পাবলিশ থেকে শুরু করে অনুভূতি প্রকাশ করা, সবখানেই গিফ(GIF) ব্যবহার করে৷ এই গিফ হচ্ছে এনিমেটেড বা স্থিরচিত্র প্রদর্শনের একটি ফরম্যাট।

ইন্সটাগ্রাম যখন স্টোরিতে গিফের ব্যবহার চালু করলো, তখন ইন্সটাগ্রামের অনেকগুলো ব্র্যান্ড এটিকে ব্র্যান্ডের সচেতনতা বাড়ানোর একটি মাধ্যম হিসেবে চিন্তা করলো। তখন তারা কাস্টম গিফ আপলোড করা শুরু করলো যাতে সকলেই ব্যবহার করতে পারে।

এখন যেহেতু গিফের ট্রেন্ড চলছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন চাচ্ছে এনিমেটেড ইমেজ বা ছবি ক্রয় করে, সেগুলো গিফ আকারে কমিউনিকেশনে ব্যবহার করতে। তাই আপনার যদি এনিমেটেড ইমেজ ডিজাইনিংয়ে দক্ষতা থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনি এগুলো ডিজাইন করে তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। তাছাড়া আপনি বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটেও এই এনিমেটেড ছবিগুলো বিক্রি করে আয় করতে পারেন।

গ্রাফিক্স ডিজাইনের অনেক বিস্তৃত ক্ষেত্রগুলোর কয়েকটির কথা কেবল বলা হয়েছে এখানে। এগুলো ছাড়াও আরো অসংখ্য উপায়ে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং করে অর্থ আয় করা যায়৷ 

শেষ কথা

গ্রাফিক্স ডিজাইন কী এবং এর বিস্তৃতি যে কতটা বৃহৎ তা আমরা কিছু আন্দাজ করতে পারছি। বর্তমানে, বিশ্বের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলোর একটি হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইন। তাই আপনার যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনিং ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে আপনি নিশ্চিন্তেই শুরু করতে পারেন। আশা করা যায়, আপনার সামনে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। 

তৌহিদ

ABOUT TOUHID

4 thoughts on “গ্রাফিক্স ডিজাইন কী? গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে কিভাবে আয় করবেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *