গাইডব্লগ

ইমেইল মার্কেটিং কী? কিভাবে ইমেইল মার্কেটিং করবেন?

বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে প্রতিনিয়তই এর পরিধি বাড়ছে। আর সেই সাথে এর ক্ষেত্রগুলোও বাড়ছে। নিত্যই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের নতুন নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কার হচ্ছে। তেমনই একটি ক্ষেত্র হলো ইমেইল মার্কেটিং৷

ইমেইল মার্কেটিং” বলতে আসলে কী বোঝায়? ইমেইল দিয়ে কীভাবে মার্কেটিং করা যায়? ইমেইল তো কেবল যোগাযোগের মাধ্যম! এই প্রশ্নগুলো হয়তো আমাদের অনেকের মনেই উঁকি দিচ্ছে। হ্যা, ইমেইল ব্যবহার করেও মার্কেটিং করা যায় এবং বর্তমানে এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের একটি শক্তিশালী অংশ। আজকে আমরা ইমেইল মার্কেটিং কী, কীভাবে ইমেইল মার্কেটিং করবেন, এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে আলোচনা করবো।

অবশ্যই পড়বেন: কন্টেন্ট মার্কেটিং কী

ইমেইল মার্কেটিং কী?

আমরা জানি, কোনো পণ্য বা সেবা, অফার বা ব্যবসার প্রচার-প্রচারণা করাকে বলা হয় মার্কেটিং। আর যখন সেই পণ্য বা সেবা, অফার বা ব্যবসার প্রচার-প্রচারণা ইমেইলের মাধ্যমে চালিয়ে তা মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করে তখন তাকে বলা হয় ইমেইল মার্কেটিং।

সচরাচর আমরা যেভাবে একজন আরেক জনকে ইমেইল পাঠিয়ে থাকি, ইমেইল মার্কেটিংও একই প্রক্রিয়াতেই করা হয়। তবে এই ক্ষেত্রে কেবলমাত্র একজনকে নয়, বরং একইসাথে অনেকগুলো মানুষের কাছে ইমেইল পাঠানো হয়৷ এতে করে মুহূর্তের মধ্যেই আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে বিজ্ঞাপন অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।

সাধারণত বিক্রি এবং লিড জেনারেট করার জন্য ইমেইল মার্কেটিং ব্যবহার করা হয়। আজকাল বিশ্বের অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠান প্রায়শই ইমেইল মার্কেটিংয়ের আশ্রয় নিচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানও আজ ইমেইল মার্কেটিংকে অনেক বেশি প্রাধান্য দেয়।

ইমেইল মার্কেটিং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ইমেইল মার্কেটিং কেন গুর

ডিজিটাল মার্কেটিং প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে বর্তমানে ইমেইল মার্কেটিং বহুল জনপ্রিয়। আপনি ভাবতে পারেন যে কেন এটি এতোটা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, কেন এর গুরুত্ব এতোটা বেশি৷ আসলে ইমেইল মার্কেটিং এতো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন :

  • এটি অনেক সহজ, সাধারণ এবং লাভজনক একটি মার্কেটিং কৌশল।
  • বর্তমানে ইমেইল মার্কেটিংয়ের দ্বারা সবচেয়ে বেশি গ্রাহক পাওয়া যায়।
  • ইমেইল মার্কেটিং করে ওয়েবসাইট, ব্লগ বা অন্য যেকোনো প্লাটফর্মে অনেকগুলো ভিজিটর বা গ্রাহক আনা যায়।
  • কম সময়ে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়।
  • কেবলমাত্র একটি ক্লিকে অসংখ্য মানুষের কাছে নিজের পণ্য বা সেবা, অফার, ব্লগ, ভিডিও কন্টেন্ট, বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা ইত্যাদি অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।
  • অল্প সময়ে ব্যবসার প্রসার ঘটানো সম্ভব।
  • অন্যান্য ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশলগুলোর তুলনায় এটিতে অনেক কম খরচ হয়। তাছাড়া সম্পূর্ণ ফ্রি কিছু ইমেইল মার্কেটিং টুল রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে আপনি একদম বিনামূল্যেই ইমেইল মার্কেটিং করতে পারবেন।
  • গ্রাহকের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরিতে ইমেইল মার্কেটিং অনেক বেশি কার্যকরী।
  • গ্রাহককে সবকিছুর সার্বক্ষণিক আপডেট দিয়ে গ্রাহককে ধরে রাখতে সাহায্য করে।

এই সকল কারণে বর্তমানে মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে ইমেইল মার্কেটিং অনেক বেশি গুরুত্ব অর্জন করেছে।

অবশ্যই পড়বেন: সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কী

কীভাবে ইমেইল মার্কেটিং করবেন?

ইমেইল মার্কেটিং বলতে কী বোঝায় তা আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি৷ এখন আমাদের জানতে হবে ইমেইল মার্কেটিং কীভাবে কাজ করে।

ইমেইল মার্কেটিং করার জন্য আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে ইমেইল লিস্ট তৈরি করা। এর জন্য ইমেইল মার্কেটিং সার্ভিসের সাথে আপনার ওয়েবসাইটকে সংযুক্ত করে ইমেইল সাবস্ক্রিপশন সংগ্রহ করা। এতে সাবস্ক্রাইবারদের ইমেইল লিস্ট সরাসরি আপনি পেয়ে যাবেন৷ অতঃপর সেখান থেকে আপনি বিভিন্ন সময় আপনার প্রয়োজন মতো ইমেইল পাঠাতে পারবেন৷

ইমেইল মার্কেটিং কীভাবে কাজ করে বা কীভাবে ইমেইল মার্কেটিং করবেন সে ব্যাপারে নিচে কিছুটা ধারণা দেওয়া হলো :

ইমেইল মার্কেটিং টুলস

ইমেইল মার্কেটিংয়ের জন্য সাধারণত দুই ধরণের টুল(Tool) ব্যবহার করা হয়। একটি হলো ফ্রি টুল বা বিনামূল্যে যে টুলগুলো ব্যবহার করা যায়। আরেকটি হলো পেইড টুল বা অর্থ দিয়ে যা ব্যবহার করতে হয়।

আপনি ভাবতে পারেন যে মেইল পাঠাতে কেন আবার টুল ব্যবহার করতে হবে? কেনো ইয়াহু(Yahoo), গুগল(Google), আউটলুক(Outlook) বা এরকম কোনো প্লাটফর্ম থেকে সরাসরি মেইল পাঠানো যাবেনা? এর কারণ হলো আপনি যখন এই প্লাটফর্মগুলো থেকে একসাথে এতোগুলো মানুষকে মেইল পাঠাবেন, তখন তারা আপনার মেইল এড্রেসটি স্প্যাম হিসেবে ধরে নিবে এবং আপনার একাউন্টটি ব্লক করে দিবে। এজন্য আপনাকে ইমেইল মার্কেটিং টুলস ব্যবহার করতে হবে।

ফ্রি ইমেইল মার্কেটিং টুলস    

ইমেইল মার্কেটিংয়ের একটি অন্যতম সুবিধা হচ্ছে আপনি ফ্রিতে বা বিনামূল্যেও এটি করতে পারবেন। আপনি আপনার নিজস্ব ব্লগ বা যেকোনো প্লাটফর্মের মাধ্যমে ইমেইল মার্কেটিং করতে পারেন।

যেমনটা আমরা বলেছি, ইমেইল মার্কেটিংয়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইমেইল লিস্ট। আপনি নিজেই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সার্চ করে এই লিস্টটা তৈরি করে নিতে পারেন। অথবা টুলস ব্যবহার করেও এই লিস্ট তৈরি করে নিতে পারেন। নিজে খুঁজে খুঁজে লিস্ট তৈরি করা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ এবং কষ্টসাধ্য বলে বর্তমানে ফ্রি টুলস ব্যবহার করেই সাধারণত এই কাজটি করা হয়। তবে এই প্রক্রিয়াটি কতটা কার্যকরী হবে তা বলা সম্ভব নয়।

বর্তমানে ইমেইল লিস্ট সংগ্রহ করতে বেশ কিছু জনপ্রিয় ফ্রি টুলস রয়েছে,যেমন :

  • অপ্টিনমনস্টার(OptinMonster)
  • সুমোমি(SumoMe)
  • স্লিকনোট(Sleeknote)
  • ব্লুম(Bloom)
  • গ্র্যাভিটি ফর্মস(Gravity Forms)

তবে ফ্রি টুলে ইমেইল স্প্যাম হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই আমাদের পরামর্শ থাকবে পেইড টুল ব্যবহার করার জন্য।

পেইড ইমেইল মার্কেটিং টুলস

ফ্রি এবং পেইড টুলগুলোর মধ্যে পেইড টুলগুলোয় সর্বোত্তম। ফ্রি টুলগুলোর অনেক রকম সীমাবদ্ধতা রয়েছে,তাছাড়া স্প্যামিংয়ের ঝুঁকি রয়েছে, এজন্য পেইড টুল ব্যবহার করাই উত্তম।

আপনি পেইড টুল ব্যবহার করে হাজার হাজার মানুষের কাছে ইমেইল পাঠাতে পারবেন। এই সংখ্যাটি ফ্রি টুলের তুলনায় অনেক বেশি।

বর্তমানে বেশ কিছু জনপ্রিয় ইমেইল মার্কেটিং টুলস হলো :

এই টুলগুলোতে ক্যাটাগরি ভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যান থাকে। যেমন বেসিক প্ল্যানে হয়তো আপনি ৫০০০+ সাবস্ক্রাইবার চাইলে আপনার এক রকম খরচ আসবে। আবার প্রিমিয়াম প্ল্যানে সেই একই সাবস্ক্রাইবার আনতে আপনার আরো বেশি খরচ হবে। তবে যে প্ল্যানই আপনি ব্যবহার করুন না কেন সবগুলোই অনেক বেশি কার্যকর।

পেইড টুল ব্যবহারে আপনার কিছুটা খরচ হলেও এর বিনিময়ে আপনি যা ফেরত পাবেন সেই তুলনায় এটা কিছুই না। তাছাড়া এই ক্ষেত্রে স্প্যামিংয়ের কোনো সুযোগ নেই, তাই সেটি নিয়েও আপনাকে ভাবতে হবে না।

ইমেইল গবেষণা

ইমেইল গবেষণা

আপনি যখন কোনো ব্যবসা শুরু করবেন তখন আপনাকে আপনার আশেপাশের মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে গবেষণা করতে হবে। অনলাইন মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়৷ মার্কেটপ্লেসে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীরা কীভাবে, কোন কৌশলে ইমেইল মার্কেটিং করছে তা আপনাকে জানতে হবে।

প্রথমেই আপনি আপনার পণ্য বা সেবা নিয়ে কীভাবে ইমেইল মার্কেটিং করবেন তার একটি নিখুঁত পরিকল্পনা তৈরি করুন। ইমেইলে আপনার অফার, পণ্য বা সেবা এবং তার মূল্য, উপকরণ সবকিছু ঠিকঠাক রেখে গ্রাহকের কাছে উপস্থাপন করবেন, যাতে গ্রাহক সেটির প্রতি আকর্ষণ বোধ করে।

ইমেইল লিস্ট তৈরি করতে আপনাকে কত সময় দিতে হবে, মার্কেটপ্লেসে আপনার প্রতিযোগিদের বর্তমান অবস্থা, কীভাবে তারা গ্রাহককে আকর্ষণ করছে, এই বিষয়গুলো আপনাকে বিবেচনা করতে হবে।

এই ক্ষেত্রে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে রাখা জরুরি যে ইমেইল মার্কেটিং করুন বা যেকোনো মার্কেটিং, পণ্যের মান যেনো ভালো হয়৷ আপনি যত ভালোই মার্কেটিং করুন না কেন, পণ্যের মান ভালো না হলে সবই আসলে মূল্যহীন। তাই এই বিষয়টিতে বিশেষ নজর দিতে হবে।

প্রাইভেসি রক্ষা

যেহেতু আপনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তির ইমেইলে প্রচারণা চালাবেন, তাই আপনাকে তাদের প্রাইভেসি রক্ষা করতে হবে। তাদের ইমেইল এড্রেস আপনার কাছে থাকার কারণে যেনো তাদের প্রাইভেসির কোনো ক্ষতি না হয় এই বিষয়টা আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে। তাই তাদের এই ইমেইলগুলো অন্য কোনো ওয়েবসাইটে পাবলিশ বা কোনো ব্যক্তির কাছে দেওয়া যাবেনা।

অপ্ট ইন(Opt-in) ব্যবহার করুন

যেহেতু আপনি অসংখ্য মানুষকে ইমেইল পাঠাবেন, সেক্ষেত্রে আপনি কীভাবে বুঝবেন যে গ্রাহক আপনার ইমেইলটি গুরুত্ব সহকারে দেখছে কিনা বা আদৌ দেখছে কিনা। এই ক্ষেত্রে আপনি যদি ইমেইলে অপ্ট ইন ব্যবহার করেন, তাহলে গ্রাহক আপনার ইমেইলটি ওপেন করার সাথে সাথেই তা সাবস্ক্রাইবড হয়ে যাবে। পরবর্তীতে গ্রাহক চাইলে যেকোনো সময়েই সাবস্ক্রিপশন বন্ধ করে দিতে পারে।

ইমেইল বডি লাইন আকর্ষণীয়ও করুন

ইমেইল বডি লাইন আকর্ষণীয

আপনার ইমেইলটি যদি আকর্ষণীয় না হয়, তাহলে কিন্তু গ্রাহক সেটির প্রতি উৎসাহিত হবেনা। আপনি যদি ইমেইলে সুন্দর সাবলীল ভাষায় আপনার ব্যবসা বা পণ্যের পরিচয়, এর কাজ কী – এই বিষয়গুলি পরিষ্কার করে উপস্থাপন করেন, তাহলে গ্রাহক আপনার সেবার প্রতি আগ্রহবোধ করবে।

মেইলের “সাবজেক্ট” অপশনে আপনার ইমেইলটি করার উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে দিতে হবে। সেটা হতে হবে স্পষ্ট ভাষায় এবং একেবারেই সংক্ষেপে। যদি গ্রাহকের সাবজেক্টই পছন্দ না হয় সেক্ষেত্রে সে পুরো মেইলটি নাও পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি মেইলের মূল অংশটি  আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করেও কেবলমাত্র সাবজেক্টকে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে আপনাকে কিছু গ্রাহক হারাতে হবে।

তাই আপনাকে মেইলটি এমনভাবে তৈরি করে গ্রাহকের কাছে পাঠাতে হবে যাতে করে তারা সেটি পড়ে আপনার সেবা নিতে আগ্রহী হয়।

উপহার বা গিফট ইমেইল দিন

উপহার বা গিফট ইমেইল দিন

অবশ্যই পড়বেন: গ্রাফিক্স ডিজাইন কী

ইমেইল মার্কেটিং শেখার সহজ উপায়

ইমেইল মার্কেটিং শিখতে হলে আপনাকে ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা থাকতে হবে। এই ধারণাটা আপনি বিভিন্নভাবেই পেতে পারেন, যেমন :

ইমেইল মার্কেটিং টিউটোরিয়াল

ইমেইল মার্কেটিং শেখার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ইমেইল মার্কেটিং টিউটোরিয়াল দেখা। আপনি ইউটিউবে সার্চ করলে দেশি বিদেশি অনেকগুলো ভাষাতেই টিউটোরিয়াল পাবেন। সেখান থেকে আপনার পছন্দমতো একটা বেছে নিয়ে খুব সহজেই আপনি ইমেইল মার্কেটিং করতে পারবেন।

আপনি যদি বাংলায় ইমেইল মার্কেটিং শিখতে চান, তাহলে আপনি যেকোনো একটি বাংলা টিউটোরিয়াল বেছে নিয়ে সেখান থেকে খুব সহজেই শিখতে পারেন। এক্ষেত্রে ভাষাগত কোনো দূর্বলতা না থাকায় আপনি সবকিছু সহজে বুঝতে পারবেন এবং ভালো মতো আয়ত্ত্ব করতে পারবেন।

আর যদি আপনি ইংরেজিতে দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে ইংরেজি টিউটোরিয়ালগুলো দেখতে পারেন। সেটা করতে পারলে আপনি বিশ্বমানের ইমেইল মার্কেটিং শিখতে পারবেন৷ কারণ ইমেইল মার্কেটিংয়ের বর্তমান অবস্থান কেমন, তারা কীভাবে ইমেইল মার্কেটিং করে সবকিছুই আপনি এখান থেকে বুঝে ফেলতে পারবেন, যা আপনাকে ভবিষ্যতে কোনো কাজ করতে চাইলে সেখানেও সহযোগিতা করবে।

ইমেইল মার্কেটিং কোর্স

ইমেইল মার্কেটিং শেখার আরেকটি অন্যতম উপায় হচ্ছে ইমেইল মার্কেটিং কোর্স করা। আজকাল নতুনদের অনেকেই ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কে মূল ধারণাটা নেওয়ার জন্য ইমেইল মার্কেটিং কোর্স করে থাকে। ইমেইল মার্কেটিংয়ের পেইড, ফ্রি, অনলাইন, অফলাইন সবরকম কোর্সই রয়েছে। আপনি আপনার সুবিধা অনুযায়ী যেটা ইচ্ছা সেটা বেছে নিতে পারেন।

আজকাল যদিও অফলাইনের চেয়ে মানুষ অনলাইন কোর্সকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। কারণ সেক্ষেত্রে আপনি ঘরে বসেই কোর্সটি করে ফেলতে পারছেন, পাশাপাশি আপনার সময়ও বাঁচলো।

আপনি গুগলে সার্চ করলে ইমেইল মার্কেটিংয়ের অনেকগুলো কোর্স পাবেন। দেশি, বিদেশি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা বা প্লাটফর্ম প্রায়ই ইমেইল মার্কেটিং কোর্স করিয়ে থাকে। আপনার যে ভাষাতে ইচ্ছা, যেটা ইচ্ছা সেটাই আপনি পছন্দ করে কোর্স করতে পারেন।

সাধারণত ইমেইল মার্কেটিংয়ের পেইড, আনপেইড দুইরকম কোর্সই রয়েছে। আপনি নিজে ঠিক করুন আপনি কী রকম কোর্স করতে পারেন। দুটোর মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। তবে পেইড কোর্সে বিষয়গুলো আরেকটু বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন আপনি। তবে ফ্রি কোর্সেও মূল বিষয়টা আপনি আয়ত্ত্ব করতে পারবেন।

ইমেইল মার্কেটিং ব্লগ, বই বা পিডিএফ

ইমেইল মার্কেটিং শেখার আরেকটি কার্যকরী উপায় হচ্ছে ইমেইল মার্কেটিং ব্লগ, বই বা পিডিএফ পড়া। বিশ্বের নামীদামি অনেক ইমেইল মার্কেটার প্রায়ই ইমেইল মার্কেটিং নিয়ে ব্লগ লিখে থাকেন৷ তাদের ব্লগগুলো পড়লে আপনি বুঝবেন তারা কীভাবে ইমেইল মার্কেটিং শুরু করেছেন, কী কী সমস্যায় পরেছেন, কীভাবে তারা সফলতার চূড়ান্ত সিড়িতে এসে পৌঁছেছেন সবকিছুই আপনি সেখান থেকে জানতে পারবেন। পাশাপাশি এটাও বুঝতে পারবেন কীভাবে আপনি আগাবেন এবং কীভাবে একজন সফল ইমেইল মার্কেটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।

তাছাড়া ইমেইল মার্কেটিং নিয়ে অনেকগুলো জনপ্রিয় বই রয়েছে৷ আপনি যেকোনো জনপ্রিয় লাইব্রেরিতে গেলেই সেগুলো পেয়ে যাবেন। তাছাড়া আপনি বিভিন্ন ই-বুক ওয়েবসাইট থেকে অনলাইন অর্ডারও করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি যে দেশেই থাকেন না কেন, তারা আপনার কাছে বই পৌঁছে দিবে।

আবার অনেকগুলো জনপ্রিয় বইয়ের পিডিএফ ভার্সনও পাওয়া যায়। আপনি সেগুলো খুব সহজেই অনলাইন থেকে নামিয়ে তা পড়ে ইমেইল মার্কেটিং শিখতে পারেন। বই হয়তো সবসময় হাতের কাছে থাকে না বা কিছু ভুলে গেলে কোর্স বা টিউটোরিয়াল দেখে সেটা শুধরিয়ে নেওয়ার সুযোগও সবসময় থাকেনা। কিন্তু পিডিএফ মোবাইলেই থাকে বলে আপনি যেকোনো সময়ই মোবাইল থেকে তা দেখে নিতে পারেন।

আর এই পিডিএফগুলো বেশিরভাগই বিনামূল্যেই পড়া যায়। কিছু হয়তো অর্থ দিয়ে ডাউনলোড করতে হয়। তবে তাও খুব বেশি না।

অবশ্যই পড়বেন: ওয়েব ডিজাইন কী

ইমেইল মার্কেটিং করে কীভাবে আয় করা যায়?

ইমেইল মার্কেটিং করে কীভ

এই ডিজিটালাইজেশনের যুগে ইমেইল মার্কেটিং থেকে আয় করার অনেকগুলো সহজ উপায় রয়েছে। তন্মধ্যে জনপ্রিয় কিছু মাধ্যম নিম্নে আলোচনা করা হলো যেগুলো থেকে সহজেই অর্থ উপার্জন করা যায় :

  • এফিলিয়েট প্রোগ্রাম

ইমেইল মার্কেটিং করে অর্থ উপার্জনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো এফিলিয়েট প্রোগ্রাম। আপনি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ভিজিট করলে দেখবেন তাদের এফিলিয়েট প্রোগ্রাম রয়েছে । এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে আপনি তাদের পণ্য বা সেবা বা অফার বিক্রি করে, সেখান থেকে আয় করতে পারবেন।

তাদের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনার প্রথমে সেখানে সাইন ইন করতে হবে। এফিলিয়েট প্রোগ্রাম অপশনটিতে গিয়ে খুব সহজেই আপনি এটা করে ফেলতে পারেন। তাদের সাথে যুক্ত হয়ে যাওয়ার পর আপনি মানুষের কাছে তাদের পণ্য, সেবা, অফার বা ব্যবসার প্রচারণা করতে পারবেন। আর যত বেশি তা বিক্রি হবে তত বেশি কমিশন আপনি অর্জন করতে পারবেন।

  • ই-কমার্স প্রোডাক্ট বা পণ্য

বর্তমান বিশ্বে অনেকগুলো জনপ্রিয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বা সাইট রয়েছে। আপনি তাদের সাথে যুক্ত হয়ে তাদের পণ্য বা ব্যবসার প্রচারণা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এর জন্য প্রথমে আপনাকে কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হতে হবে। আপনি যে প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হতে চান তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে সেখানের এফিলিয়েট প্রোগ্রাম অপশনে গিয়ে সাইন ইন করে ফেলুন।

তারপর আপনি তাদের পণ্য, সেবা, অফার বা ব্যবসার কথা ইমেইল আর মাধ্যমে জানাতে শুরু করে দিন । আপনার প্রচারণা দেখে মানুষ উৎসাহিত হয়ে কাজটি করলে বা পণ্যটি কিনলে আপনি সেখান থেকে অর্থ আয় করতে পারবেন।

  • ই-বুক বা ভিডিও টিউটোরিয়াল

ইমেইল মার্কেটিং করে অর্থ আয় করার আরেকটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হলো ই-বুক বা ভিডিও টিউটোরিয়াল। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এই ক্ষেত্রে আপনাকে কোনো খরচ করতে হবেনা৷ আপনি কারো বই(Ebook) বা কোর্সের ভিডিও টিউটোরিয়াল মানুষের কাছে প্রচার করে ইমেইল করতে পারেন৷ আপনার প্রচারণা দেখে কেউ বইটি কিনলে বা কোর্সটি করতে রেজিষ্ট্রেশন করলে সেখান থেকে আপনি আয় করতে পারবেন। যত বেশি মানুষ বই কিনবে বা কোর্স করবে তত বেশি আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন৷

  • সার্ভিস বা অফার

এটি মূলত আপনার ব্যবসার বিশেষ কোনো সার্ভিস বা অফার থাকলে সেক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়৷ ধরুন কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা কোনো ব্যবসায়ী চাচ্ছে তার ব্যবসার বিশেষ করে কোনো সার্ভিস বা অফারের কথা মানুষ জানবে৷ সেক্ষেত্রে আপনি তাদের হয়ে কাজটি করতে পারেন।

  • ফ্রিল্যান্সিং সাইট

আপনি কোনো ফ্রিল্যান্সিং সাইটে একাউন্ট খুলে সেখানে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ইমেইল মার্কেটিং করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। বর্তমান যুগে ফ্রিল্যান্সিংয়ের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। আপনি খুব সহজেই কোনো একটা ফ্রিল্যান্সিং সাইটে একাউন্ট খুলে ফেলতে পারেন। কয়েকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইট হলো :

  • ফাইভার.কম(Fiverr)
  • আপওয়ার্ক.কম(Upwork)
  • ফ্রিল্যান্সার.কম(Freelancer.com)
  • পিপলপারআওয়ার(Peopleperhour.com)
  • গুরু.কম(Guru.com) ইত্যাদি৷

এগুলোর যেকোনো একটিতে আপনি সহজেই একটি একাউন্ট খুলে ফেলতে পারেন। একাউন্ট খোলার পর দেখবেন দেশি বিদেশি অনেকগুলো ক্লায়েন্ট ইমেইল মার্কেটার খোঁজ করছে। আপনি অফার দেখে আপনার পছন্দমতো যেকোনোটা বেছে নিতে পারবেন। আর যে ক্লায়েন্টের হয়ে ই-মেইল মার্কেটিং করবেন, বিনিময়ে তিনি বা তারা আপনাকে কমিশন দিবে। ফ্রিল্যান্সিং সাইটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এখানে আপনাকে পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক দেওয়া হয় আর এগুলো নির্ভরযোগ্য।

ইমেইল মার্কেটিংয়ের অসুবিধা

অসংখ্য সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ইমেইল মার্কেটিংয়ের বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে, যেমন :

  • সঠিক এবং যথার্থ ইমেইল লিস্ট না পেলে মার্কেটিং করা কঠিন হয়ে যায়। ধরুন আপনি জামা-কাপড়ের মার্কেটিং করতে চাচ্ছেন। কিন্তু আপনার ইমেইল লিস্টের বেশিরভাগ গ্রাহকই প্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহী। সেক্ষেত্রে আপনাকে সমস্যায় পরতে হতে পারে।
  • যেকোনো মানুষের ইমেইলের ইনবক্সে অনেকগুলো মেইল থাকে। আপনি যদি আপনার ইমেইলটি আকর্ষণীয় সাবজেক্ট এবং বডি লাইন দিয়ে উপস্থাপন করতে না পারেন তাহলে মানুষের সেটা ওপেন না করার সম্ভাবনাই বেশি।
  • কোনো রকম নেভিগেশন করার প্রয়োজন হলে সে প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল।
  • অপরিচিত ইমেইল এড্রেস থেকে মেইল গেলে মানুষ অনেক সময় সেটাকে সন্দেহজনক ভেবে ওপেন করে দেখতে চায় না।
  • সঠিকভাবে প্রচারণা চালাতে না পারলে পণ্য, অফার এমনকি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎও হুমকির মুখে পরে যায়।
  • অন্যান্য জনপ্রিয় মার্কেটিং প্রক্রিয়াগুলোর তুলনায় এর জনপ্রিয়তা কিছুটা কম।

এরকম কিছু অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও ইমেইল মার্কেটিংয়ের যে সুবিধাগুলো দিয়ে থাকে তার তুলনায় সেটা কিছুই না।

ইমেইল মার্কেটিংয়ের প্রয়োজনীয় কিছু টিপস

  • আপনি যখন ইমেইল লিস্ট সংগ্রহ করবেন তখন ইমেইল এড্রেসগুলোর পাশে কোন ব্যক্তি কী ধরনের পণ্য বা সেবা নিবে বা নিতে পারে সেটা সংক্ষিপ্ত আকারে লিখে রাখতে পারেন৷ এটা পরবর্তীতে আপনার অনেক দরকারে আসবে।
  • আপনার ইমেইল মার্কেটিং কীভাবে আরো আকর্ষণীয় করা যায়, মানুষ সেটা কীভাবে দেখছে এই বিষয়ে আপনাকে নিয়মিত গবেষণা করতে হবে।
  • আপনার সবগুলো মেইল ঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ক্লিক বক্স(Click Box), বাল্ক(Bulk), মেইল চেকার (Mail Checker) ইত্যাদি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন।
  • যে পণ্যগুলোর বিজ্ঞাপন আপনি করবেন সেগুলোর উপস্থাপনা যেনো আকর্ষণীয় হয় এবং পণ্যগুলোর ক্যাটাগরি যেনো ভাগ করা থাকে। এর ফলে গ্রাহকের যে পণ্য প্রয়োজন সে পণ্যের ক্যাটাগরির উপর ক্লিক করলে নিমিষেই ওয়েবসাইটের ওই ক্যাটাগরিতে পৌঁছে যাবে আর সেখান থেকে তার পছন্দ মতো পণ্য কিনতে হবে।

শেষ কথা

অন্যান্য ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশলগুলোর মতো ইমেইল মার্কেটিং এতোটা জনপ্রিয় না হলেও, বাকিগুলোর তুলনায় এটি খুবই সহজ একটি প্রক্রিয়া৷ তাই আজকাল ডিজিটাল মার্কেটারদের অনেকেই এটির দিকে ঝুঁকছে। একটা সময় হয়তো অন্যান্য মার্কেটিং কৌশলগুলোকে পেছনে ফেলে ইমেইল মার্কেটিংই জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকবে।

তৌহিদ

ABOUT TOUHID

5 thoughts on “ইমেইল মার্কেটিং কী? কিভাবে ইমেইল মার্কেটিং করবেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *